বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা না দেওয়ায় চিকিৎসকে মারধর, আটক ১

সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসককে মারধর করার অভিযোগে আটক তরুণকে থানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে সদর হাসপাতালে।
ছবি: প্রথম আলো

বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা না দেওয়ায় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসককে এক ব্যক্তি মারধর করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। চিকিৎসককে মারধর করার ঘটনায় ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে।

আটক ব্যক্তির নাম মিজানুর রহমান (২০)। তাঁর বাড়ি সদর হাসপাতালের পাশের হাসননগর এলাকায়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করছিলেন চিকিৎসক আবু জাহিদ মোহাম্মদ মাহমুদ। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে মিজানুর রহমান জরুরি বিভাগে এসে তাঁর ভাই অসুস্থ জানিয়ে ওই চিকিৎসককে বাড়িতে যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু চিকিৎসক তাঁকে জরুরি বিভাগের দায়িত্ব রেখে বাইরে যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ সময় তিনি রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য মিজানুরকে অনুরোধ করেন।

পরে মিজানুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে চলে গিয়ে কিছুক্ষণ পর তাঁর ভাইকে নিয়ে সেখানে আসেন। এ সময় চিকিৎসক আবু জাহিদ মোহাম্মদ মাহমুদ তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেন। চিকিৎসা দেওয়ার পর মিজানুর তাঁর বাড়িতে না যাওয়ার বিষয়টি তুলে ওই চিকিৎসকের ওপর চড়াও হন এবং তাঁকে চড়-থাপ্পড় মারেন। পরে অন্য লোকজন এসে তাঁকে সরিয়ে দেন।

বিষয়টি জানাজানি হলে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হন। পরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. আনিসুর রহমান সবাইকে নিয়ে বৈঠক করেন। একপর্যায়ে মিজানুর রহমান এলাকার আরও কিছু লোক নিয়ে আবার হাসপাতালে গিয়ে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাতে রাজি হয়নি। তখন পুলিশ গিয়ে মিজানুরকে ধরে থানায় নিয়ে আসে।

জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা আবু জাহিদ মোহাম্মদ মাহমুদ বলেন, ‘আমি বিনয়ের সঙ্গে ওনাকে (মিজান) বলেছি, জরুরি বিভাগের দায়িত্ব রেখে বাইরে যাওয়া সম্ভব নয়। পরে রোগী নিয়ে আসার পর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছি। এরপরও তিনি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে আমার ওপর হামলা চালান।’

সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমও) জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত দাশ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই চিকিৎসক ও স্বাস্থকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় হাসপাতালে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। আমরা এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। একই সঙ্গে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েনের দাবি জানাই।’

জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এই তরুণ এর আগেও হাসপাতালে এসে একজন নার্সকে ছুরিকাঘাত করেছেন। এখন আবার চিকিৎসককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সহিদুর রহমান বলেন, মিজানুর রহমানকে পুলিশ আটক করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।