
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে রংপুরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তাজহাট জমিদারবাড়িতে প্রবেশে কোনো টিকিট লাগছে না। এখানে ঘুরতে আসা লোকজন তাই বেজায় খুশি আজ। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে, অনেকে বন্ধুরা দল বেঁধে ছুটে আসছেন। তাজহাট জমিদারবাড়ি এলাকায় গিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে।
ঘুরতে আসা লোকজনের ধারণা ছিল না যে প্রবেশে টিকিট লাগবে না। তাজহাট জমিদারবাড়ির বিশাল প্যালেস, জাদুঘর ঘুরে দেখার পাশাপাশি সবুজ বাগানে তাঁরা হাঁটছেন, ফটোসেশন করছেন, তুলছেন সেলফি।
জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন এখানে গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। তবে শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন হাজারের অধিক লোকের সমাগম হয়। এখানে প্রবেশে জনপ্রতি টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঁচ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের লোকদের জন্য ১০০ টাকা এবং এর বাইরে বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশমূল্য ২০০ টাকা। এক টিকিটে দর্শনার্থীরা জমিদারবাড়ির স্থাপত্য নিদর্শন ছাড়াও জাদুঘর ঘুরে দেখতে পারেন।
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে রংপুরের তাজহাট জমিদারবাড়ি নির্মাণ করেন তৎকালীন মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায়। এই জমিদারবাড়িকে ২০০৫ সালে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়।
শহরের মাহীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আকবর আলী এসেছেন স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে। তিনি বলেন, বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে দিনভর জাদুঘরে প্রবেশে টিকিট লাগছে না, এর মজাই আলাদা।
তাজহাট জমিদারবাড়ি দেখতে আসা কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের একটি দলের কয়েকজন বলে, বিনে পয়সায় জাদুঘর ঘুরে দেখতে পেরে তারা দারুণ খুশি। তবে শুধু বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী নয়, প্রতিটি সরকারি দিবসে বিনে পয়সায় প্রবেশের ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এই জাদুঘরের কথা বেশি বেশি করে প্রচারও করতে হবে। সবাই জানবে। এখানে ছুটে আসবে। ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিতি ঘটবে।
রংপুরের তাজহাট জমিদারবাড়িকে ২০০৫ সালে জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়। এটি সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাধীন। এখানে পুরোনো পাণ্ডুলিপি, উল্কাপিণ্ড, মৃৎশিল্প, কামান, বিষ্ণুমূর্তি, লোহা কাঠ, পাথরের তৈরি নানা আমলের গয়নাসহ অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে।
রংপুর জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্বাভাবিক দিনের চেয়ে আজ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে মানুষের বেশি ভিড় হচ্ছে। সকাল থেকে আসছেন মানুষজন। প্রবেশে কোনো টাকা লাগছে না। সবাই পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দর পরিবেশে ঘুরছেন। আমাদের প্রত্যাশা, মানুষের আগ্রহ এমনটাই যেন সব সময় থাকে।’
রংপুর শহরের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত তাজহাট জমিদারবাড়ি জাদুঘর। প্রসাদটির দৈর্ঘ্য ৭৬ দশমিক ২০ মিটার। সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি ১৫ দশমিক ২৪ মিটার প্রশস্ত প্রধান সিঁড়িটি সরাসরি দোতলায় চলে গেছে। দোতলার ১১টি কক্ষ জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর নিচের ১১টি অফিসকক্ষ। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এটি নির্মাণ করেন তৎকালীন মহারাজা কুমার গোপাল লাল রায়।