খুলনা নগর

বেড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা

অদক্ষ চালক, সহজে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা, দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল কেসিসি।

খুলনা নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ। তবু বিভিন্ন অলি–গলিতে এবং মূল শহরে চলতে দেখা যায় এই রিকশা। গতকাল পিকচার প্যালেস মোড়ে
 ছবি: প্রথম আলো

২০১৯ সালের প্রথম দিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা উল্টে পড়ে পা ভেঙে গিয়েছিল খুলনা নগরের নিরালা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সাহিনা বেগমের। ভাঙা পা নিয়ে কয়েক মাস কঠিন সময় পার করেছেন তিনি।

নিষিদ্ধ করার পরও নগরে এসব রিকশার চলাচল আবার বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই নারী। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরালা আবাসিক এলাকার মধ্যে অধিকাংশ রিকশাই ব্যাটারিচালিত। এসব রিকশা দেখলে এখন আতঙ্কে থাকি। কিন্তু চলাচলে অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় বাধ্য হয়ে এসব রিকশায় উঠতে হয়।

অদক্ষ চালক, সহজে নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা, ছোটখাটো দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়াসহ অন্যান্য কারণে ২০১৯ সালের অক্টোবর মাস থেকে নগরে ব্যাটারিচালিত রিকশার চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। এরপর অনেকে রিকশার ব্যাটারি খুলে ফেলেছিলেন। কিন্তু ছয় মাস ধরে দেখা যাচ্ছে, নগরে আবারও বেড়েছে এসব রিকশার চলাচল।

বিশেষ করে বিভিন্ন অলি-গলিতে হরদম চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় এসব রিকশার সংখ্যা বেড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে বলে মনে করেন নাগরিক নেতারা।

কাঠামোগত কারণে এসব রিকশা ব্যাটারি-ইঞ্জিন ব্যবহারের যোগ্য নয় বলে উল্লেখ করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) খুলনা মহানগর শাখার সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, কেসিসি নিষিদ্ধ করার পরও নগরের সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এসব রিকশা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এগুলো মানুষের আয়ের মাধ্যম হতে পারে না। এর কারণে নগরের সড়কগুলোয় প্রতিদিন অনেক দুর্ঘটনা ঘটছে।

নগরবাসীর চলাচল নিরাপদ করতে এসব রিকশা বন্ধের দাবি জানিয়ে ইকবাল হোসেন বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকদের কোনো ট্রাফিক জ্ঞান, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তালুকদার আবদুল খালেক মেয়র হওয়ার পর এসব রিকশা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেন। কিন্তু একশ্রেণির চাঁদাবাজ ও কেএমপির ট্রাফিক বিভাগের উদাসিনতার কারণে আবারও এসব রিকশার চলাচল শুরু হয়েছে।

গতকাল শনিবার নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিরালা আবাসিক এলাকায় চলাচলকারী প্রায় সব রিকশাই ব্যাটারিচালিত। নিরালা মোড় থেকে এসব রিকশা আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। এ ছাড়া শেরেবাংলা সড়ক, ইকবাল নগর সড়ক, আহসান আহমেদ সড়ক, সামসুর রহমান সড়ক, রূপসা স্ট্যান্ড সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে।

বেলা ১১টার দিকে আহসান আহমেদ সড়কে কথা হয় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক মিরাজুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি খুলনার কয়রা উপজেলায়। প্রতি দিন ৪৫০ টাকায় গল্লামারী এলাকার এক গ্যারেজ থেকে রিকশাটি ভাড়া নিয়েছেন জানিয়ে মিরাজুল বলেন, কয়রায় কাজ না থাকায় মাসের ১৫ থেকে ২০ দিন শহরে এসে রিকশা চালান। এই সময় এক বস্তিতে থাকেন। পরিবারের সদস্যরা থাকেন কয়রায় গ্রামের বাড়িতে। খুব সহজে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালানো যায় ও পরিশ্রম কম হয়। এ কারণে তিনি এ রিকশা চালান। তবে প্রধান সড়কে মাঝেমধ্যে পুলিশ ঝামেলা করায় অলি-গলিতেই বেশি থাকার চেষ্টা করেন।

নগরের কয়েকজন রিকশার যাত্রী বলেন, ব্যাটারিচালিত এসব রিকশায় মোটর সংযোজনের পর গতি বাড়লেও তা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে অতিরিক্ত গতির কারণে প্রায় প্রতিদিনই নগরে দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছেন অনেকে। এ অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনারোধে ও সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের দাবি তাঁদের।

ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক নগরের সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পুলিশ প্রশাসনকে বারবার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। এরপরও সম্প্রতি নগরে ওই রিকশার আধিক্য বেড়েছে। এটা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুলিশের।

জানতে চাইলে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) উপকমিশনার মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে অনেক প্রতিবন্ধী এসব রিকশা চালাচ্ছেন। তাই মানবিক কারণে ছেড়ে দিতে হয়। এছাড়া অলি-গলিতে ট্রাফিক পুলিশ থাকে না, এ সুযোগে ওইসব সড়কে এসব রিকশা চলাচল করে। এখন থেকে ওইসব সড়কেও এগুলো চলাচল বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।