
ইউপি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য নৌকার প্রার্থীকে পরামর্শ দিলেন পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগদলীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজ। শুধু পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি; নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে ওই প্রার্থীর ওপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করেন সাংসদ। ওই ইউপিতে সাংসদের ভাতিজা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে আছেন। ২১ জুন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা।
সম্প্রতি সাংসদ ফিরোজের কথাসংবলিত ৯ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বাউফলের কালাইয়া বন্দরে সাংসদ তাঁর নিজ বাসভবনে বসে কথাগুলো বলছিলেন দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে।
অডিওতে নৌকার প্রার্থী আমির আলীকে উদ্দেশ করে আ স ম ফিরোজ বলছেন, ‘ভোট যদি একেবারে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়, তুমি হবা না।’ এ সময় আমির আলী বলেন, ‘শোনেন, ভোট নিরপেক্ষ হলে আমি হব।’ এরপর সাংসদ ফিরোজ অনেকটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এসমস্ত কথাবার্তা আমাকে কইয়ো না। তুমি স্বাস্থ্যগতভাবে ঠিক নাই। লেখাপড়া জানো না। তোমারে একবার সুযোগ দিছিলাম, চেয়ারম্যান হইতে পারো নাই। আলকাস মোল্লা (আসম ফিরোজের ভাতিজা) চেয়ারম্যান হইছে। ও (আলকাস) মাস্টার্স পাস করা ছেলে। ওর বউও মাস্টার্স পাস। ওর জন্য চন্দ্রদ্বীপের লোকজনের মধ্যে আনন্দ চলছে।’ এ সময় নৌকার পক্ষের এক ব্যক্তি বলে বসেন, ‘আপনার ভাইয়ের ছেলে বলে তাঁকে (আলকাস মোল্লাকে) মানুষ ভয় করে।’ এ কথা শেষ হতে না হতেই সাংসদ ফিরোজ উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘এগুলো বলে আমাকে ছোট করো কেন?’
সাংসদ ফিরোজ নৌকার প্রার্থী আমির আলীকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, ‘নৌকা শেখ হাসিনা তোমাকে দিছে। কিন্তু আলকাস ভালো প্রার্থী। ও (আলকাস) গতবার বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল বলে এ বছর ওকে (আলকাস) মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। আমার কাছে ওর সম্পর্কে কোনো বাজে কথা বোলো না। আমার কাছে বাজে কথা বললে জুতা দিয়া পেটানো হবে।’
আ স ম ফিরোজের এ বক্তব্যর পর আমির আলী প্রশ্ন করেন, ‘তা হলে কি আমি ভোট বর্জন করব?’ জবাবে সাংসদ বলেন, ‘তুমি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। যদি তুমি সম্মান বাঁচাতে চাও, তাহলে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির নেতা-কর্মীদের ডাকো। নেত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলবা, আমার স্বাস্থ্য খারাপ। তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চাই। যেহেতু আলকাস মোল্লা গতবার নির্বাচিত হইছে, তাই আমি মনে করি, উন্নয়নের জন্য তাঁকে ভোট দেওয়া উচিত।
আ স ম ফিরোজের ওই অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর বাউফলে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. জসিম উদ্দিন ফরাজি বলেন, ‘বিষয়টি শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। পরে অডিওটি শুনলাম। এটা আওয়ামী লীগ ও নেত্রীর সঙ্গে প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতা।’ তিনি আরও বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হলে আমির আলী জয়লাভ করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু তিনি তাঁর ভাতিজাকে বিজয়ী করার জন্য বাউফলে অবস্থান করে নানা ষড়যন্ত্র করছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।’
অডিওর বিষয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আমির আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমপির (সাংসদ) বাসায় বসে তাঁর সঙ্গে এ–সংক্রান্ত কথাবার্তা হয়েছে। তখন আরও লোকজন ছিল। কে বা কারা সেই কথা রেকর্ড করেছে, আমি জানি না। আমি নৌকা মার্কা নিয়ে শেষ পর্যন্ত মাঠে আছি, থাকব এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জিতব।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে নৌকার পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিলেও তাঁর পক্ষে কেউ প্রচারণায় অংশ নেননি এখনো।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাংসদ আ স ম ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অডিও ক্লিপের একদম শেষে বলা আছে, আপনি যদি স্বাস্থ্যগত কারণে নির্বাচন করতে না পারেন, তাহলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসে আলাপ করেন। আর যদি নির্বাচন করে জয়লাভ করেন, তাহলে আমার চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হবে না। এই ইউনিয়নটা আমি করেছি। আপনাকে আমি মনোনয়ন দিয়েছি। আপনি মনোনয়ন না চাইলেও আপনার নাম মনোনয়ন বোর্ডে পাঠাইছি, যাতে আপনি মনোনয়ন পান।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে গতবারও এই ভদ্রলোককে আমি মনোনয়ন দিয়েছি। তিনি জয়ী হইতে পারেন নাই।’
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তিনি (সাংসদ আসম ফিরোজ) আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থীকে সরে যেতে বললে গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করেছেন, যা আওয়ামী লীগের কোনো নেতা কিংবা সাংসদের বলার অধিকার নেই।’
আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নে মোট চারজন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকের আমির আলী হাওলাদার, এনামুল হক ওরফে আলকাস মোল্লা আনারস প্রতীকে ও তাঁর স্ত্রী মুনমুন চশমা প্রতীকে এবং মো. ইদ্রিস আলী বিশ্বাস হাতপাখা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।