Thank you for trying Sticky AMP!!

রংপুর মেডিকেল থেকে ছাত্রীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর, থানায় মামলা

রুবাইয়া ইয়াসমিন (২২)

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গতকাল সোমবার দুপুরে এক কলেজছাত্রীর লাশ রেখে তরুণের পালানোর ঘটনায় থানায় রাতেই মামলা হয়েছে। ওই ছাত্রীকে অপহরণ ও মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যার অভিযোগে ওই তরুণসহ দুজনকে আসামি করে নীলফামারীর জলঢাকা থানায় মামলাটি হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর তরুণীর পরিবারের কাছে তাঁর লাশ হস্তান্তর করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন সদরুল করিম ওরফে ফয়সাল (২৪) এবং রেজভি আহমেদ (১৯)। ফয়সাল ঢাকার সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনার্স তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং রেজভি উচ্চমাধ্যমিক পাস।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই কলেজছাত্রীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এসেছিলেন ফয়সাল। ১১টা ৫৫ মিনিটে ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। এরপর লাশটি হাসপাতালেই ফেলে পালিয়ে যান ফয়সাল। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের রেজিস্ট্রারে দুর্ঘটনায় মেয়েটি আহত হয়েছিল বলে লেখা হয়েছে।

নিহত ছাত্রীর নাম রুবাইয়া ইয়াসমিন (২২)। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়তেন। তাঁর বাড়ি নীলফামারী সদরের কচুকাটা ইউনিয়নে। বাবার নাম আবদুর রাজ্জাক। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নেওয়ার আগে রুবাইয়াকে প্রথমে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়েছিলেন ফয়সাল।

Also Read: রংপুর মেডিকেলে ছাত্রীর লাশ রেখে পালালেন তরুণ

স্বজন ও জলঢাকার স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, গতকাল সকাল নয়টার দিকে বাড়ির পাশের জলঢাকার টেংগনমারী বাজারের রজনীগন্ধা হোটেলের সামনে কচুকাটা ইউনিয়নের বর্ম্মতল গ্রামের মো. আবদুল্লাহর ছেলে ফয়সাল ও তাঁর সহযোগী রেজভি জোর করে রুবাইয়াকে তাঁদের মোটরসাইকেলে তুলে নেন। চার কিলোমিটার দূরে রাজারহাট এলাকায় মোটরসাইকেল থেকে পড়ে মাথায় আঘাত পান রুবাইয়া। পরে ওই তরুণসহ স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁকে উদ্ধার করে জলঢাকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ফয়সাল তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখানেই মেয়েটি মারা যান। রুবাইয়ার মৃত্যুর খবর শুনে লাশ ফেলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান ফয়সাল।

নিহত ছাত্রীর বাবা আবদুর রাজ্জাক আজ প্রথম আলোকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকার কারণে তাঁর মেয়ে টিউশনি করতেন। প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালে বাড়ি থেকে হেঁটে টিউশনি করতে যাওয়ার পথে ফয়সাল ও রিজভী জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘ওই ছেলের (ফয়সালের) সঙ্গে আমার মেয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না। অপহরণের পর আমার মেয়ে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ কারণে তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

করোনার কারণে দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকার কারণে মেয়ে টিউশনি করত। প্রতিদিনের মতো গতকাল সকালে বাড়ি থেকে হেঁটে টিউশনি করতে যাওয়ার পথে ফয়সাল ও রিজভী জোরপূর্বক মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। ওই ছেলের (ফয়সালের) সঙ্গে আমার মেয়ের কোনো সম্পর্ক ছিল না। অপহরণের পর আমার মেয়ে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করছিল। এ কারণে তাকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
আবদুর রাজ্জাক, নিহত ছাত্রীর বাবা

জলঢাকা থানা-পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। পরে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রুবাইয়ার লাশ রয়েছে। কে বা কারা সেখানে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। নিহত রুবাইয়ার পরিবারের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে অভিযুক্ত ফয়সাল মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন।

রংপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশ ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, গতকাল বেলা ১১টা ৫ মিনিটে এক তরুণ ‘রিমু’ নাম দিয়ে ওই তরুণীকে হাসপাতালে ভর্তি করান। কিছুক্ষণ পরেই মেয়েটি মারা গেলে তাঁকে নিয়ে আসা তরুণকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

নীলফামারী জলঢাকা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান জানান, এ ঘটনায় রুবাইয়ার বাবা আবদুর রাজ্জাক গতকাল রাতে ফয়সাল ও রেজভিকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশ ময়নাতদন্তের পর আজ দুপুরে নিহত রুবাইয়ার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।