‘রাঘববোয়ালদের পক্ষ নিয়ে অন্যায়ভাবে শরীফকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে’

দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে জাগ্রত ছাত্রসমাজ কক্সবাজার। আজ শুক্রবার বিকেল, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে মানববন্ধন হয়েছে। দুদকের এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সেখানে একজন বক্তা অভিযোগ করেছেন, শরীফ উদ্দিন ক্ষমতাধরদের দুর্নীতি তুলে ধরেছিলেন, সেই সব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো তাঁকেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

দুদক পটুয়াখালী কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে গত বুধবার চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়। গত বছরের ১৬ জুন পটুয়াখালীতে বদলির আগে শরীফ দুদকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।

সে সময় সরকারি প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে অনিয়মের ঘটনা তদন্ত করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করেছিলেন তিনি। দায়িত্ব পালনের কারণে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন জানিয়ে থানায় জিডিও করেছিলেন দুদকের এই কর্মকর্তা। তাঁকে চট্টগ্রাম থেকে বদলি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।

শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকেলে বন্দরনগরীর জামালখান এলাকায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন জাগ্রত ছাত্রসমাজ নামের একটি সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। শরীফকে অপসারণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে অবিলম্বে তাঁকে চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি জানান তাঁরা।

মানববন্ধনে জাগ্রত ছাত্রসমাজ কক্সবাজারের সভাপতি ফজলে আজিম মোহাম্মদ ছিগাতুল্লাহ বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন কক্সবাজার, চট্টগ্রামে বড় রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা তদন্ত করেছেন। রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে ভোটার হওয়ার বিষয়টিও তদন্তের মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন। তিনি কারও সঙ্গে আপস করেননি। সৎ এই কর্মকর্তার পক্ষ না নিয়ে দুদক রাঘববোয়ালদের পক্ষ নিয়ে অন্যায়ভাবে তাঁকে চাকরিচ্যুত করেছে, যা একধরনের দুর্নীতি।’

শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায়ও মানববন্ধন হয়েছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেন দুদকেরই এক দল কর্মকর্তা। তাঁদের ভাষ্যমতে, শরীফ উদ্দিন সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁকে চাকরি থেকে অপসারণ করায় চট্টগ্রামেও দুদক কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, শরীফ উদ্দিন চট্টগ্রামে কর্মরত অবস্থায় রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে ভোটার করায় জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলা, অবৈধ গ্যাস–সংযোগ দেওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্য মো. মুজিবুর রহমান, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেন, সাবেক মহাব্যবস্থাপক মো. আলী চৌধুরীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করে আলোচনায় আসেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কসংলগ্ন বাইপাস সড়ক এলাকায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন–পিবিআইয়ের কার্যালয় নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ কর্মকর্তা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দিয়ে মামলার সুপারিশ করেন। তাঁর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, রেলসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির ঘটনার তদন্তে ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তার নাম উঠে আসায় আলোচনায় ছিলেন শরীফ উদ্দিন। গত ৩০ জানুয়ারি হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শরীফ উদ্দিন।

জিডিতে তিনি লিখেছিলেন, ৩০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে দুই ব্যক্তি তাঁর বাসায় এসে তাঁকে হুমকি দেন। বলেন, তিনি দুদকে কীভাবে চাকরি করেন, তা তাঁরা দেখে নেবেন। এর ১৬ দিনের মাথায় শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও দুদকে শরীফ উদ্দিনের সহকর্মীদের ভাষ্য, তাঁকে পটুয়াখালীতে বদলি করানোর পেছনে দুর্নীতিবাজ চক্রের হাত রয়েছে। একইভাবে তাঁর চাকরিচ্যুতির পেছনেও এই চক্রের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।

মানববন্ধনে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ফজলে আজিম মোহাম্মদ ছিগাতুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।