রাজবাড়ীতে বিনা মূল্যে অক্সিজেন ও অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে যান তাঁরা

রাজবাড়ী জেলার মানচিত্র
রাজবাড়ী জেলার মানচিত্র

রাজবাড়ীতে করোনা রোগীদের বিনা মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন সেবা দিচ্ছে রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবীরা। ফোন পেয়েই তাঁরা ছুটে যান জেলার যেকোনো প্রান্তে। অসহায় মানুষকে পৌঁছে দেন খাবারসহ নানা সেবা।

রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি রাজবাড়ী জেলা ইউনিট সূত্রে জানা যায়, করোনাকালে রেডক্রিসেন্ট থেকে বিভিন্ন ধরনের সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এসব সেবার মধ্যে আছে বিনা মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার, কনসেনট্রেটর, রান্না করা খাবার বিতরণ। অ্যাম্বুলেন্স সেবা প্রথমে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পরিচালিত হতো। পরে কেন্দ্রের অনুমতিতে অসহায় রোগীদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নেওয়া হচ্ছে। এতে সহায়তা করছেন সংস্থার একঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক।

অ্যাম্বুলেন্সে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন একজন স্বেচ্ছাসেবক। তিনি কারিগরি বিষয়টি দেখভাল করেন। এ ছাড়া পালা করে আরও তিনজন প্রতিদিন এই সেবায় যুক্ত থাকেন।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজওয়ানা নাহিদ বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আমার মায়ের শরীর খুব খারাপ হয়ে যায়। কিছুতেই তাঁর জ্বর যাচ্ছিল না। রেডক্রিসেন্টের সেক্রেটারির সঙ্গে যোগাযোগ করলে অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে দেন। পাংশা থেকে আমার মাকে নিয়ে আসি। তাঁরা খুব আন্তরিক সেবা দেন। টাকা-পয়সা নেন না।’

সজ্জনকান্দা গ্রামের লরেন্স বাঁধন বাড়ৈ বলেন, ‘মায়ের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। হাসপাতালে নেওয়ার খুব প্রয়োজন হয়। ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাজির হন। আমরা কৃতজ্ঞ।’

রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের নয়নদিয়া গ্রামের বাসিন্দা চঞ্চল সরদার। তিনি পেশায় সংবাদকর্মী। চঞ্চল বলেন, ‘আমি করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতেই ছিলাম। কিন্তু কয়েক দিন আগে আমার শ্বাসকষ্ট খুব বেড়ে যায়। সবাই হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তখন ফোন দিলে রেডক্রিসেন্টের অ্যাম্বুলেন্স চলে আসে। আমি এখন সুস্থ হয়েছি। ভালো আছি।’

ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমার স্বামীর শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। রাত তখন ১২টা বাজে। হাসপাতালে নেওয়া প্রয়োজন। কোনো গাড়ি–ঘোড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন রেডক্রিসেন্টের কথা মনে পড়ে। ফোন দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স চলে আসে। কোনো টাকা-পয়সা নেয়নি। ব্যবহারও খুব ভালো। আমার স্বামী এখন অনেকটাই সুস্থ। কিন্তু সেই রাতের কথা আমাদের মনে থাকবে।’

অ্যাম্বুলেন্সে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনকারী স্বেচ্ছাসেবক রাহিম মোল্লা বলেন, ‘প্রথম প্রথম একটু একটু ভয় লাগতো। তবে সবসময় সতর্কতা অবলম্বন করে কাজ করি। রোগীকে যখন তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেই, তখন রোগী ও তাদের স্বজনরা খুব দোয়া করেন। কেউ কেউ স্ট্যাটাস দেন। তখন মন খুব ভালো হয়ে যায়। নতুন উদ্যোমে কাজ করার অনুপ্রেরণা পাই। সবমিলিয়ে এই দুর্যোগকালে মানুষের সেবা করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’

রাজবাড়ীতে রেডক্রিসেন্টের সার্বিক কার্যক্রমের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন সংস্থার সেক্রেটারি সহযোগি অধ্যাপক শামীমা আক্তার মুনমুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। ছোটবেলা থেকেই রেডক্রিসেন্টের সঙ্গে জড়িত। করোনাকালে সাধ্য অনুযায়ি মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন ছাড়াও রান্না করা খাবার সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। মানুষকে সেবা দিতে না পারলে খুব অপরাধবোধ কাজ করতো। সবাইকে সচেতন হতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’