রাবেয়ায় খুশিতে মা–বাবার মুখে হাসি
পঞ্চম শ্রেণি থেকে শুরু করে যতগুলো পাবলিক পরীক্ষা হয়েছে, তার সব কটিতেই জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর তিনি চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। পড়াশোনায় গতি বাড়ান। কিন্তু সংসারে ছিল অভাব-অনটন। তবু দমে যাননি তিনি। ফলে তিনি কঠোর পরিশ্রমের ফল পান।
২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে মেধা তালিকায় তাঁর স্থান হয়েছে ২ হাজার ১২। রংপুর মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়ে চোখে আনন্দ অশ্রু ঝরছে রাবেয়া আক্তার রুমির।
রাবেয়া কুষ্টিয়া কুমারখালী পৌরসভার ৬ নম্বর ওর্য়াডের সেরকান্দি এলাকার বাসিন্দা। বাবা রমজান আলী পেশায় একজন চপ-পেঁয়াজু বিক্রেতা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের ফুটপাতে চপ-পেঁয়াজু বিক্রি করে সংসার চালান তিনি। মা লাইলা খাতুন গৃহিণী। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রাবেয়া সবার বড়। ছোট বোন তাসনিম অন্তরা সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট ভাই মেহরব ইসলামের বয়স চার বছর। জায়গাজমি বলতে তাঁদের ৪ শতক জায়গার ওপর একটি টিনের ঘর রয়েছে।
রাবেয়া কুমারখালী এমএন পাইলট হাইস্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি ও কুমারখালী সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেন।
রোববার রাবেয়াদের বাড়িতে যাওয়া হয়। তখন দেখা যায়, তাঁর বাড়িতে আশপাশের প্রতিবেশীদের ভিড় লেগে আছে। রাবেয়াকে অভিনন্দন জানিয়ে দোয়া করছেন তাঁরা। এ সময় রাবেয়া বলেন, মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা ছিল, সেটা পূরণ হলো। এ জন্য শিক্ষকসহ যাঁরা বিভিন্নভাবে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। ফলাফল ঘোষণার দিন তিনি সারা দিন ছটফট করেছেন। কখন সুখের খবরটা শুনবেন। সারা দিন কোনো খাবারও খেতে পারেননি। রাত পৌনে ১০টায় যখন এক বন্ধুর মাধ্যমে ভর্তির সুযোগের খবর পান, তখন আনন্দে অঝরে কেঁদেছিলেন তিনি।
মেডিকেলে ভর্তির জন্য কোচিং করতে এক বান্ধবীর মামির মাধ্যমে ঢাকায় একটি কোচিং সেন্টারে অনলাইনে ভর্তি হয়েছিলেন। বাবার ওয়ালটন স্মার্টফোনে ক্লাস করতেন রাবেয়া। এ ছাড়া বাড়িতেই পড়াশোনা করতেন।
রমজান আলী বলেন, ‘আমি পড়ালেখা জানি না। মেয়ের পড়ালেখায় আগ্রহ দেখে তাঁকে সাহস দিয়েছি। কষ্ট হলেও মেয়েকে আজ তাঁর স্বপ্নের সিঁড়িতে ওঠাতে পেরেছি। আগামী দিনেও যত কষ্ট হোক, তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করতে সংগ্রাম চালিয়ে যাব।’
মা লাইলা খাতুন বলেন, ‘সংসারে অভাব আছে। কিন্তু মেয়ের পড়ালেখায় ক্ষতি হয়, তাই সেটা বুঝতে দিইনি।’
এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায় একবার খারাপ করেছিলেন। তবে সে সময় মা–বাবা তাঁকে আরও বেশি ভালোবেসেছিলেন। কখনো বকা দেননি। রাবেয়া আক্তারের মতে, পড়াশোনায় কিছু সময় খারাপ হতেই পারে, সে জন্য বকা দেওয়া ঠিক নয়। বরং আদর ও ভালোবাসায় পাশে দাঁড়াতে হয়। তাহলে পরীক্ষার্থী নিশ্চয় ভালো ফল করবে।
চিকিৎসাবিদ্যায় ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে অসহায় শিশুদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে রাবেয়ার। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি শরৎচন্দ্রের বই পড়তে তিনি খুব পছন্দ করেন।
কুমারখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বিনয় কুমার বলেন, ‘রাবেয়া খুবই মেধাবী। তাঁকে কলেজ থেকে বই দেওয়া থেকে শুরু করে সব রকম সুযোগ–সুবিধা দেওয়া হতো। তাঁর সাফল্যে আমরাও গর্বিত।’
আরও পড়ুন
-
পৃথিবীর কোন দেশে সেন্ট্রাল ব্যাংকে ঢুকতে পারছে অবাধে: ওবায়দুল কাদের
-
পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসনে হাজার কোটি টাকা বাড়তি চায় চীনা ঠিকাদার
-
রাঙামাটিতে এলোপাতাড়ি গুলিতে ইউপিডিএফের কর্মীসহ দুজন নিহত
-
বিশ্বের সেরা এয়ারলাইনস আট মাসের বেতনের সমান বোনাস দিচ্ছে
-
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজের ভেন্যুতে ঝড় বয়ে গেছে