
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় গাড়িচাপায় একটি দাঁড়াশ সাপের মৃত্যু হয়েছে। উদ্যানের বাঘমারা বন ক্যাম্পসংলগ্ন কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কে দ্রুতগামী কোনো একটি গাড়ি প্রাণীটিকে চাপা দেয়। আজ বুধবার বিকেলে মৃত অবস্থায় সাপটিকে কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া উদ্ধার করেন। সাপটি প্রায় ৭ ফুট দৈর্ঘ্যের ছিল।
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ব্যস্ততম ঢাকা-সিলেট রেলপথ ও কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়ক। সড়কের দুই পাশেই গভীর বন। বনের প্রাণীগুলো দিনরাত সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে চলাচল করে। রাতের বেলায় সেগুলোর বিচরণ বেড়ে যায়। রেলপথ ও সড়কপথ পারাপারের সময় ট্রেন ও দ্রুতগামী যানবাহনের আঘাতে প্রায়ই বন্য প্রাণী মারা পড়ছে।
বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য ১ হাজার ২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়া বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয় ১৯৯৬ সালে। বিরল ও বিপন্ন অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে। প্রাণবৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই বনের ভেতর দিয়ে চলে গেছে ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়ক। আর ঢাকা-সিলেট রেলপথের প্রায় ৮ কিলোমিটার পড়েছে এ বনের ভেতর।
বনের প্রাণীগুলো দিনরাত সড়কের এপাশ থেকে ওপাশে চলাচল করে। রেলপথ ও সড়কপথ পারাপারের সময় ট্রেন ও দ্রুতগামী যানবাহনের আঘাতে প্রায়ই বন্য প্রাণী মারা পড়ছে।
কমলগঞ্জ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আহাদ মিয়া বলেন, ‘বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে শ্রীমঙ্গল যাওয়ার পথে হঠাৎ সাপটিকে রাস্তায় মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। পরে রাস্তা থেকে সাপটিকে উদ্ধার করে নির্জন একটা স্থানে নিয়ে মাটিচাপা দিই।’
বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল সড়কের উন্নয়ন হওয়ার পর এ পথে দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচল করছে বলে মাঝেমধ্যে গাড়িচাপায় বন্য প্রাণী মারা যাচ্ছে। কীভাবে বন এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রিত গতিতে চলে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দাঁড়াশ সাপ মূলত নিরীহ প্রজাতির নির্বিষ ও উপকারী সাপ। এই সাপ প্রচুর পরিমাণে ইঁদুর খেয়ে ফসল রক্ষা করে। এ জন্য একে কৃষকের বন্ধুও বলা হয়। এই সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Ptyas mucosa। ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান র্যাট স্নেক বা ওরিয়েন্টাল র্যাট স্নেক নামে পরিচিত। বিষহীন এই সাপ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। এগুলোর দেহের রং হালকা বাদামি বা হলুদ বাদামি কিংবা জলপাই বাদামি। সাপটিকে গোখরা সাপ বলে ভ্রম হতে পারে। এ কারণে সাপটি মানুষের হাতে বেশি মারাও পড়ে। এগুলোর সাধারণত কোনো ফণা থাকে না এবং এগুলোর মাথা গোখরা সাপের মাথার তুলনায় বেশ সরু। লম্বায় সাধারণত ৫ থেকে সাড়ে ৬ ফুট, তবে কোনো কোনোটি ১২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। দাঁড়াশ সাপ গাছ বেয়ে উঠতে দক্ষ, সাঁতার কাটতে, ডুব দিয়ে থাকতে এবং দ্রুত ছুটতে পারে। ধরা পড়ার পর কিছুটা মারমুখী দেখালেও পরে খুব সহজেই পোষ মেনে যায়। ইঁদুর, ছুঁচা, ব্যাঙ ইত্যাদি খেয়ে দাঁড়াশ সাপ জীবন ধারণ করে। শিকার ধরামাত্রই গিলতে শুরু করে।