সাংসদ রেজাউলকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ দুদকের

সাংসদ রেজাউল করিম
ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের সাংসদ রেজাউল করিমকে (বাবলু) সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয় থেকে বুধবার বিকেলে এ নোটিশ দেওয়া হয়।

দুদকের পাঠানো নোটিশে সাংসদ ছাড়াও তাঁর ওপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদেরও সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলা হয়েছে। ২১ কার্যদিবসের মধ্যে দুদকে এ বিবরণী দাখিল করতে হবে।

দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠায় সাংসদ রেজাউল করিমকে দুদক কার্যালয়ে সশরীর হাজির হয়ে সম্পদের যাবতীয় নথি উপস্থাপনের জন্য প্রথমে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়ে নোটিশ পাঠানো হয়। গত ১৪ মার্চ কার্যালয়ে সশরীর হাজির হয়ে সাংসদ তাঁর সম্পদের বিবরণীর তথ্য দেন। তবে তিনি যে তথ্য দেন, তার সঙ্গে তাঁর প্রকৃত সম্পদের গরমিল পাওয়া গেছে।

দুদকের সহকারী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, সাংসদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের প্রাথমিক তদন্তে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য মিলছে। এ কারণে সাংসদ ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে রেজাউল করিম নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি সম্পদ অর্জনের অভিযোগ মিলছে তাঁর বিরুদ্ধে। বগুড়ায় তাঁর নির্মাণাধীন বাড়ি, ঢাকায় ফ্ল্যাট, ব্যক্তিগত তিনটি গাড়ি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে; যা হলফনামায় নেই। এর মধ্যে তাঁর শুল্কমুক্ত একটি বিলাসবহুল জিপ আছে। নামে-বেনামে অবৈধ অর্থবিত্ত অর্জনের অভিযোগ পেয়ে তাঁকে যাবতীয় সম্পদের নথিসহ দুদক কার্যালয়ে তলব করা হয়। এর মধ্যে তাঁর নিজের এবং স্ত্রী, সন্তান ও পোষ্যদের নামে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের দালিলিক নথি; নিজের ও স্ত্রীর নামে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সত্যায়িত প্রতিলিপি এবং পাসপোর্টের ফটোকপি জমা নেওয়া হয়।

হলফনামায় দেওয়া তথ্যের সঙ্গে প্রকৃত সম্পদের গরমিল প্রসঙ্গে সাংসদ রেজাউল করিম বলেন, ‘একটি শুল্কমুক্ত ল্যান্ডক্রুজার পাজেরো ও একটি মাইক্রোবাস আর বগুড়ার শাজাহানপুরে একটি বাসা আছে। এর বাইরে সম্পদ আছে কি না, তা গণমাধ্যমে জানাতে চাইছি না। সব তথ্য দুদককে দিয়েছি। এরপরও দুদক নতুন করে সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠিয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পদ বিবরণী দাখিল করা হবে।’

হঠাৎ বনে যাওয়া সাংসদ
বগুড়া-৭ আসনটি ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান গাবতলী ও পাশের উপজেলা শাজাহানপুর নিয়ে গঠিত এ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনেই ধানের শীষ প্রতীকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। এখানে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন গাবতলীর বিএনপি নেতা ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন। কিন্তু তাঁর পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় মনোনয়নপত্রটি বাতিল হয়। আসনটি বিএনপির প্রার্থীশূন্য হয়ে পড়ে।

রেজাউল করিম ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। দলীয় প্রার্থী না থাকায় শেষ মুহূর্তে রেজাউল করিমকে বিএনপি থেকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ট্রাক প্রতীক নিয়ে রেজাউল করিম ১ লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন।
সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় তাঁর পেশা লেখা ছিল ‘ব্যবসা ও সাংবাদিকতা’। তাঁর ও তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় পাঁচ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমা ছিল ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া ছিল একটি পুরোনো মোটরসাইকেল।