Thank you for trying Sticky AMP!!

সেচের পানি না পেয়ে দুই কৃষকের মৃত্যু দুঃখজনক: বিএমডিএ চেয়ারম্যান

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান বলেছেন, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পেয়ে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুই কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা দুঃখজনক। তিনি বলেন, সেচ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বে অবহেলাকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ বুধবার বিকেলে বরেন্দ্র ভবনের নিজ দপ্তরে উন্নয়ন সংস্থা ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। বেগম আখতার জাহান বলেন, বিএমডিএ কৃষকদের প্রতিষ্ঠান। কৃষকদের স্বার্থেই বিএমডিএ কাজ করে। কিন্তু কৃষকদের সঙ্গে বিএমডিএর যোগাযোগের ঘাটতির কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটে গেছে। নিবিড় যোগাযোগ থাকলে এটা হতো না। দুই কৃষক আত্মহত্যা না করে যেকোনো মাধ্যমে পানি নিয়ে সমস্যার কথা জানালে তাঁরা ব্যবস্থা নিতেন। তিনি জানান, ঘটনার দিন তিনি ঢাকায় ছিলেন। পরেও তাঁকে দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় থাকতে হয়েছে। তাই তিনি ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি। তবে আগামী শনিবার তিনি ঘটনাস্থলে যাবেন।

Also Read: তদন্তে পানি দেওয়ায় অনিয়ম পেয়েছে কমিটি

এ সময় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা সংগঠন রক্ষাগোলা সমন্বয় কমিটির সংগঠক মো. আরিফ, গোদাগাড়ী উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি কৃষ্ণ কুমার সরকার বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ ও ভারপ্রাপ্ত সচিব ইকবাল হোসেন এবং রাজশাহীর কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

বেগম আখতার জাহান বলেন, দুই কৃষক আত্মহত্যা না করে যেকোনো মাধ্যমে পানি নিয়ে সমস্যার কথা জানালে তাঁরা ব্যবস্থা নিতেন।

মতবিনিময়কালে রক্ষাগোলার সংগঠক মো. আরিফ বিএমডিএ চেয়ারম্যানের কাছে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। তিনি সেচ ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বে অবহেলাকারী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি, গভীর নলকূপের অপারেটর নীতিমালা পরিবর্তন ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের অপারেটর হিসেবে নিয়োগ এবং বিষপানে আত্মহত্যা করা দুই কৃষকের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেন। নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে কৃষক, কৃষিবান্ধব সাংবাদিক ও সংগঠকদের সঙ্গে নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

Also Read: সেচের জন্য বিষ পান করা কৃষকের জমি ফেটে চৌচির, নিয়েছিলেন মহাজনের ঋণ

বিএমডিএ চেয়ারম্যান এসব দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। তিনি এসব ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয়। পরিস্থিতিই মানুষকে সবকিছু বোঝায়। মাঠপর্যায়ের সবকিছুই ঢেলে সাজাতে চাই।’

Also Read: গোদাগাড়ীতে বিষপানে আরও এক ভাইয়ের মৃত্যু

আলোচনাকালে বিএমডিএর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, কোনো কোনো অপারেটর গভীর নলকূপ তাঁদের পৈতৃক সম্পত্তি মনে করেন। নানা অভিযোগ আসে। অভিযোগ পাওয়া ও ব্যবস্থা নেওয়ার কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন থেকে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই তাঁকে বাদ দেওয়া হবে। কোনো কথা শোনা হবে না। তিনি বলেন, ‘জীবন একটাই। আত্মহত্যা করতে হবে কেন? অভিযোগ জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

Also Read: বরেন্দ্রর সেচের পানি নিয়ে বাণিজ্য

গত ২৩ মার্চ গোদাগাড়ীর নিমঘটু গ্রামের কৃষক অভিনাথ মারান্ডি ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারান্ডি বিষ পান করেন। এতে দুজনেরই মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন তাঁদের পানি না দিয়ে ১২ দিন ধরে ঘোরাচ্ছিলেন। চোখের সামনে বোরো ধানের খেত ফেটে চৌচির হতে দেখে তাঁরা বিষ পান করেছেন।

Also Read: সেচের পানি নিশ্চিত করার দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন

এ ঘটনায় দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় দুটি আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করা হয়। পুলিশ নলকূপের অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করে। সেদিনই বিএমডিএ তাঁকে চাকরিচ্যুত করে। আলাদা তদন্ত কমিটি করে বিএমডিএ ও কৃষি মন্ত্রণালয় ঘটনা তদন্ত করেছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে গত সোমবার ৩৫টি গ্রামের সাঁওতাল কিষান-কিষানিরা বরেন্দ্র ভবনে আসেন। সেদিন বিএমডিএ চেয়ারম্যান ঢাকায় ছিলেন। রাজশাহীতে ফিরে তিনি এ মতবিনিময় সভায় বসেন।

Also Read: অপারেটর সাখাওয়াতকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি