সোনারোদে ঝরছিল ময়ূরপঙ্খির রূপ

বিশ্ব কবুতর দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম ফেন্সি পিজিয়ন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন এ কবুতর প্রদর্শন ও বিক্রির আয়োজন করে। দেওয়ানহাট মোড়, চট্টগ্রাম নগর, ১৩ জুন
ছবি: সৌরভ দাশ

ঠোঁটটা সাম্পানের মতো বাঁকানো। ময়ূরের পেখমের মতো লেজ। পালক ঝুঁকে পড়েছে পা অবধি। গা ধবধবে সাদা। মোহনীয় এই কবুতরের নাম ময়ূরপঙ্খি। গতকাল সোমবার বিকেলের সোনারোদে ময়ূরপঙ্খির রূপ আরও ঝরে পড়ছিল। দর্শনার্থীরা যেন সেই রূপে মজে গিয়েছিলেন। তাঁদের ক্যামেরার চোখে ধরা পড়ছিল রাজকীয় এই কবুতর।
দর্শনার্থীদের নজর কেড়ে নিয়েছিল লক্ষাও। কবুতরটির ছোট্ট মাথায় ক্ষুদ্র ঝুঁটি। সাদা গায়ে ছোপ ছোপ কালো দাগ। পায়ের পাতায় পালক ফুটে আছে আঁটসাঁট।

অনিন্দ্যসুন্দর এই কবুতরের দামও কম নয়। এক জোড়া তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা।

শুধু ময়ূরপঙ্খি কিংবা লক্ষা নয়, আরও প্রায় ৪০ প্রজাতির কবুতর নিয়ে গতকাল সোমবার প্রদর্শনী হয়ে গেল নগরের দেওয়ানহাট মোড়ে। ‘সন্ত্রাস নয়, মাদক নয় শান্তির প্রতীকেই শান্তি রয়’ স্লোগানে চট্টগ্রাম ফেন্সি পিজিয়ন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন নামের সংগঠন এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে। ব্যতিক্রমী এই কবুতর প্রদর্শনীতে দুপুর থেকেই মানুষের ঢল নেমে আসে। নানা রঙের দেশি-বিদেশি কবুতর নিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শৌখিন ও পেশাদার কবুতর পালকেরা এসে জড়ো হন। বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা।

চট্টগ্রাম ফেন্সি পিজিয়ন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রদর্শনীতে প্রায় ৪০ প্রজাতির কবুতর আনা হয়। দেওয়ানহাট মোড়, চট্টগ্রাম নগর, ১৩ জুন

বিকেলে প্রদর্শনী প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মোড়ের পাশে সরু রাস্তা। দুই ধারে লোহার খাঁচায় বন্দী কবুতর। গিজ গিজ করছে মানুষ। কেউ ছবি তুলছিলেন, আবার কেউ কিনে ফিরছিলেন বাসায়। এমনই একজন ওমর ফারুক। আগ্রাবাদ চৌমুহনী এলাকায় বসবাস তাঁর। শখ করে বছর তিনেক আগে কবুতর পালা শুরু করেন তিনি। শুরুতে এক জোড়া ছিল। এখন তাঁর ঘরের বারান্দায় জায়গা পেয়েছে ১০ জোড়া বিভিন্ন জাতের কবুতর।
ওমর প্রথম আলোকে বলেন, প্রদর্শনী থেকে দুই জোড়া সিরাজি ও এক জোড়া লক্ষা কিনেছেন তিনি। দাম পড়েছে সব মিলিয়ে সাত হাজার টাকা। এসব কবুতর তিনি বাসার বারান্দায় রাখবেন। কবুতর পালা তাঁর শখ।

চার খাঁচাভর্তি কবুতর নিয়ে প্রদর্শনীতে এসেছিলেন ব্যবসায়ী মেহেদি হাসান। তবে নিজেকে ‘কিং মেহেদি’ নামে পরিচয় দিলেন তিনি। বললেন, বছর পাঁচেক ধরে কবুতরের ব্যবসা করছেন। এই নামেই তাঁকে সবাই চেনে। আর কিং কবুতর তাঁর প্রিয়। তাই এই নামেই বেশি পরিচিতি পান। শুরুতে শখের বশে কবুতর পোষা শুরু করলেও এখন এটাই পেশা।

কিং মেহেদির দোকান রয়েছে দেওয়ানহাট এলাকায়। তিনি জানালেন, তাঁর খামারে এখন অন্তত ৩০ জাতের হাজার তিনেক কবুতর রয়েছে। এর মধ্যে আছে কাজ্জি, ব্ল্যাক লক্ষা, চিলা, হোমার, জিরাগলা, লালগলা। তবে প্রদর্শনীতে তিনি ১০ প্রজাতির কবুতর নিয়ে হাজির হন। সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত (জোড়া) দামের অর্ধশতাধিক কবুতর তাঁর কাছে ছিল।

প্রদর্শনীতে এক জোড়া কাজ্জি বিক্রি করতে এসেছিলেন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া আবু ওবায়েদও। সে থাকে পাহাড়তলীর এলাকায়। সে কাজ্জি বিক্রি করে ৬০০ টাকায়। প্রথম আলোকে ওবায়েদ বলল, কবুতর পোষা তার শখ। ১৬ জোড়া কবুতর রয়েছে তার কাছে। সেখান থেকে এক জোড়া বিক্রি করেছে। কাজ্জি বিক্রি করে ওবায়েদ ময়ূরপঙ্খি কিনে নেয়।

‘সন্ত্রাস নয়, মাদক নয় শান্তির প্রতীকেই শান্তি রয়’ স্লোগানে হয় কবুতর প্রদর্শনী। দেওয়ানহাট মোড়, চট্টগ্রাম নগর, ১৩ জুন

২০১৩ সালে নগরের দেওয়ানহাট মোড়ে কবুতর প্রদর্শনী ও কেনাবেচা শুরু হয়। এটির আয়োজন করে চট্টগ্রাম ফেন্সি পিজিয়ন ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির উপদেষ্টা শাকিল মোহাম্মদ ইসরাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতি বছর ১৩ জুন বিশ্ব কবুতর দিবস। আগের দিনে কবুতরের মাধ্যমে চিঠি চালাচালি হতো। এখন সেটি হয় না। কিন্তু কবুতর এখনো অনেকে শখ করে পালেন। আবার অনেকে ব্যবসা করেন। তবে দিবসটা উদ্‌যাপন করতেই কবুতরের প্রদর্শনী করা হয়।