Thank you for trying Sticky AMP!!

রায় ঘোষণার পর কারাগারে নেওয়া হচ্ছে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে। আজ বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে।

যে কারণে আয়শার মৃত্যুদণ্ড

রিফাত হত্যাকাণ্ডটি জঘন্য ও ন্যক্কারজনক। এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় আয়শা যুক্ত ছিলেন। ঘটনার সময় আয়শা তাঁর স্বামীকে রক্ষা করতে গেছেন, এটা সিমপ্যাথি আদায়ের কৌশল ছিল বলে প্রতীয়মান। আয়শা তাঁর স্বামী রিফাতকে কোপানোর সময় রিফাতকে রক্ষার চেয়ে নয়ন বন্ডকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে প্রতীয়মান।

আজ রিফাত হত্যা মামলার রায়ে আদালত এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি (পিপি) ভূবন চন্দ্র হালদার। আর মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, আয়শার পরিকল্পনায় এবং তাঁর কারণেই এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হত্যার আগে আয়শা মামলার মূল আসামি নয়ন বন্ডের সঙ্গে এক মাসে ৪৪ বার এবং নয়ন বন্ড আয়শার সঙ্গে ১৬ বার ফোনে কথা বলেছেন। এ ছাড়া অসংখ্যবার খুদে বার্তা চালাচালি করেছেন।

যেভাবে সাক্ষী থেকে আসামি

রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা ঘটনার ভিডিও প্রকাশের পর দেশজুড়ে বিষয়টি বেশ আলোড়িত হয়। এরপর এই হত্যা মামলাকে ঘিরে এ আলোচনাকে আরও জোরালো করেছে নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ওরফে মিন্নি সাক্ষী থেকে আসামি হওয়ার ঘটনা।

গত বছরের ২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে স্ত্রী আয়শার সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা ঘটনার পর ২৭ জুন এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম শরীফ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে প্রধান সাক্ষী করা হয় আয়শাকে। মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ওই বছরের ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। নয়ন বন্ড নিহত হওয়ার পরপরই বদলে যেতে থাকে মামলার দৃশ্যপট। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই হত্যায় আয়শাকে দায়ী করে বিভিন্নভাবে প্রচার শুরু হয়। মামলার ১৮ দিন পর ১৩ জুলাই এ হত্যাকাণ্ডে আয়শা জড়িত, এমন দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন আয়শার শ্বশুর আবদুল হালিম শরীফ। পরদিন আয়শার গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন তাঁরা।

Also Read: রিফাত হত্যায় স্ত্রী আয়শাসহ ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

এরপর মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। ১৬ জুলাই আয়শাকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বাড়ি থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনসে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে আয়শার বাবা মোজ্জামেল হোসেন শুরু থেকেই আয়শার গ্রেপ্তার এবং এ মামলায় তাঁকে আসামি করার ঘটনাকে প্রভাবশালী মহলের কারসাজি বলে দাবি করে আসছেন। এরপর নিম্ন আদালতে কয়েক দফা জামিন আবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর উচ্চ আদালতে আয়শার পক্ষে জামিন আবেদন করেন উচ্চ আদালতের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আইখান পান্না। গত বছরের ২৯ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আয়শাকে জামিন দেন। জামিন আদেশে বলা হয়, আয়শা তাঁর বাবার জিম্মায় থাকবেন এবং গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় হলে জামিন বাতিল হবে। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ‘নো অর্ডার’ দেন। এতে আয়শার জামিনের আদেশ বহাল থাকে। রায় ঘোষণার আগপর্যন্ত তাঁর জামিন বহাল ছিল।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা থানার তৎকালীন পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক দুই ভাগে বিভক্ত করে আদালতে পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনকে আসামি করা হয়। প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে আয়শাকে এ মামলায় ৭ নম্বর আসামি করা হয়। এরপর প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিচার শুরু হয় জেলা ও দায়রা আদালতে। অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিচারকাজ চলছে শিশু আদালতে।

Also Read: কারাগার থেকে আদালতে রিফাত হত্যা মামলার ৮ আসামি

৩২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ১৩ পৃষ্ঠায় আয়শার অপরাধের বয়ান ছিল। অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাকি ১৮ পৃষ্টায় অন্য আসামিদের অপরাধের বর্ণনা থাকলেও সেখানেও আয়শার ভূমিকার বর্ণনা করা হয়েছে। অভিযোগপত্রে আয়শার অপরাধ বর্ণনায় বলা হয়েছে, ঘটনার পর আয়শা রক্তাক্ত রিফাত শরীফকে হাসপাতালে না নিয়ে নিজের ভ্যানিটি ব্যাগ ও জুতা খোঁজায় ব্যস্ত ছিলেন। অভিযোগপত্রে নয়ন বন্ড ও তাঁর বাহিনী ০০৭–এর নানা অপরাধ ও মাদক বাণিজ্যের উল্লেখ থাকলেও হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে আয়শাকে নিয়ে নয়ন বন্ড ও নিহত রিফাত শরীফের দ্বন্দ্বকে উল্লেখ করা হয়েছে। আর রিফাত শরীফ হত্যার পরিকল্পনায় আয়শা জড়িত ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

পরে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আয়শাই রক্তাক্ত রিফাত শরীফকে রিকশায় করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। বরগুনা জেনারেল হাসপতালের সামনে লাগানো সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, গত ২৬ জুন সকাল ১০টা ২১ মিনিটে আয়শা একাই একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় করে রক্তাক্ত ও অচেতন রিফাতকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নিয়ে যান। সেখানে দাঁড়ানো এক যুবক রিফাত শরীফকে বহন করা রিকশার দিকে দৌড়ে আসেন। রিফাতের অবস্থা দেখে তিনি হাসপাতালের ভেতরে গিয়ে একটি স্ট্রেচার নিয়ে রিকশার পাশে আসেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই এগিয়ে আসেন। এরপর রিকশা থেকে নামিয়ে অচেতন রিফাত শরীফকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। এরপর আয়শা হাসপাতালের সামনে উপস্থিত একজনের ফোন নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তিনি হাসপাতালের ভেতরে যান। কিছু সময় পর আয়শার বাবা মোজাম্মেল হোসেন ও চাচা আবু সালেহ হাসপাতালে যান। সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হাসপাতালের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স আসে। এ সময় সেখানে রিফাত শরীফের বন্ধু মঞ্জুরুল আলম ওরফে জন ও তাঁর কয়েকজন বন্ধু হাসপাতালের সামনে আসেন। মঞ্জুরুল বেশ কিছু সময় ফোনে কথা বলেন। ১০টা ৪৪ মিনিটে অক্সিজেন ও ২টি স্যালাইন লাগানো অবস্থায় রিফাত শরীফকে স্ট্রেচারে করে ওই অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়। ১০টা ৪৯ মিনিটে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে অ্যাম্বুলেন্সটি।