
উপকূলীয় এলাকার মিঠাপানিতে রুই, কাতলার উৎপাদন বাড়লেও ছোট মাছের উৎপাদন কমেছে। ট্যাংরার মতো বেশ কিছু মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। প্রজননের মৌসুমে বেহুন্তি, গেটজাল ব্যবহার করে মাছ নিধনের কারণেই এসব মাছ হারিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
বর্ষা মৌসুমে জেলার অভ্যন্তরীণ খাল-বিল-জলাশয়গুলোয় নতুন পানি জমা হয়। সে সময় অভয়াশ্রম থেকে দেশি মাছ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে চেলা, দারকিনা, চান্দা, বাঁশপাতা, পাবদা, রিটা, তিতপুঁটি, ট্যাংরা, বাইম প্রভৃতি মাছ খাদ্যের সন্ধানে অল্প পানিতে তীরের দিকে ছুটে আসে। আর এ সুযোগে জেলেরা অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছগুলো নিধন করেন।
বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। এই মাছগুলোর প্রজনন মৌসুম সাধারণত বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস। কিন্তু দেশের নদী, খাল, বিলে অবৈধ জাল ব্যবহার করায় মাছগুলোর বংশবিস্তার হচ্ছে না।মীর মোহাম্মদ আলী, শিক্ষক, অ্যাকুয়াকালচার বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, পাবদা, গুলিশা ও ট্যাংরা মাছ বিলুপ্তির পথে রয়েছে। ২০১৯-২০ মৌসুমের আগে জেলায় ছোট চিংড়ি মাছের উৎপাদন ছিল ৫৭৮ টন। বর্তমানে এর উৎপাদন দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১ টনে। শিং ও মাগুর মাছ ৭৪৪ টনের জায়গায় উৎপাদন হচ্ছে ৮৮ টন। শোল, গজাল, টাকি মাছের উৎপাদন ছিল ৯০২ টন, যা কমে দাঁড়িয়েছে ২২ টনে। বোয়াল ও আইড় মাছের উৎপাদন কমেছে ৭৮৭ টন। বাটা মাছের উৎপাদন ১৬ টন থেকে ৫ টনে আর ঘইন্যা মাছের উৎপাদন ২৪ টন থেকে কমে ৩ টনে দাঁড়িয়েছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের শিক্ষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। এই মাছগুলোর প্রজনন মৌসুম সাধারণত বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস। কিন্তু দেশের নদী, খাল, বিলে অবৈধ জাল ব্যবহার করায় মাছগুলোর বংশবিস্তার হচ্ছে না। এ ছাড়া অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে খাল ভরাট করা, প্রজনন মৌসুমে পানি কমে যাওয়া, আবাসস্থল পুরোপুরি শুকিয়ে ফেলার কারণেই বিলুপ্তির পথে দেশি প্রজাতির মাছগুলো।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষায় মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি পোনা শিকার ও বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। নদী-নালা-খাল-বিলে অবৈধ জাল ব্যবহার বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান এই মৎস্য কর্মকর্তা।