শাল্লা ইউপি নির্বাচন

হেলিকপ্টারে এসে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার অভিযোগ

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর সভায় যোগ দিতে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে রওনা হওয়ার আগে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যরা। ছবিটি জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরীর ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া।
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর সভায় যোগ দিতে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে রওনা হওয়ার আগে সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যরা। ছবিটি জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরীর ফেসবুক আইডি থেকে নেওয়া।

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শাল্লা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীর এক প্রচার সভায় হেলিকপ্টারে এসে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির যোগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠছে। তবে হেলিকপ্টারে করে তাঁরা সরাসরি শাল্লায় না এসে প্রথমে পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার সীমানায় নামেন। এরপর গাড়িতে করে শাল্লায় এসে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন।

বিষয়টিতে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘিত হয়েছে দাবি করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে সদ্য বহিষ্কৃত হওয়া আবুল লেইছ চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ওই দুই নেতার মূল উদ্দেশ্য নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেওয়া। এ নিয়ে এলাকায় কয়েক দিন থেকে প্রচারণা চালানো হয়েছে। সকালে ঢাকা থেকে শাল্লায় রওনা হওয়ার সময় হেলিকপ্টারের সামনে দাঁড়ানো ছবি ফেসবুকে দিয়ে তাঁদের পক্ষ থেকে সে কথাই বলা হয়েছে। তবে তাঁরা কৌশল হিসেবে হেলিকপ্টার শাল্লায় না এনে পাশের উপজেলায় রেখেছেন। আবুল লেইছ চৌধুরী বলেন, ‘আমি ক্ষুব্ধ। তাঁরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্যই এটা করেছেন। জনসভার জন্য যে মঞ্চ করা হয়েছিল, সেটিতেও নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে।’

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শাল্লা ইউপিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মো. সাত্তার মিয়া। তাঁর সমর্থনে শাল্লা মাঠে বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচনী জনসভা আহ্বান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ মতিউর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির। এই দুই নেতা সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে প্রথমে আসেন হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে।

সেখান থেকে গাড়িতে করে ২০ মিনিটের পথ পাড়ি দিয়ে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। তাঁদের সঙ্গে ঢাকা থেকে একই হেলিকপ্টারে আসেন জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক আবুল কালাম চৌধূরী এবং জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক কামরুল হাসান। দুপুর সাড়ে ১২টায় তাঁরা শাল্লা গ্রামে এসে পৌঁছান। জনসভা শুরু হয় বেলা দুইটায়। শেষ হয় বেল সাড়ে তিনটায়। এরপর আবার হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় ফিরেন তারা।
দলীয় প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে আজমিরীগঞ্জ হয়ে শাল্লা আসার বিষয়টি সকালে ছবি দিয়ে নিজের ফেসবুকে প্রচার করেন জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী। বিকেল আবার ঢাকায় ফিরে একইভাবে ফেসবুকে বিষয়টি উল্লেখ করেন তিনি।

দলের স্থানীয় এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মূলত নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিতেই ঢাকা থেকে শাল্লায় এসেছিলেন। এই জনসভায় তাঁদের অতিথি থাকার বিষয়টি কয়েক দিন থেকে এলাকায় প্রচার করা হয়েছে।

ইউপি নির্বাচনের নির্বাচনী আচরণবিধির ১৩ নম্বর দফার যানবাহন ব্যবহারসংক্রান্ত বিধিনিষেধের ‘খ’ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘নির্বাচনী প্রচারকার্যে হেলিকপ্টার বা অন্য কোন আকাশযান ব্যবহার করা যাইবে না, তবে দলীয় প্রধানের যাতায়াতের জন্য উহা ব্যবহার করিতে পারিবেন। কিন্তু যাতায়াতের সময় হেলিকপ্টার হইতে লিফলেট, ব্যানার বা অন্য কোন প্রচারসামগ্রী প্রদর্শন বা বিতরণ করিতে পারিবেন না।’

এ প্রসঙ্গে এনামুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজমিরীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিসবাহ উদ্দিন ভুঁইয়ার বাড়িতে আমাদের দাওয়াত ছিল। আমরা সেখানে হেলিকপ্টারে গিয়েছি। যেহেতু পাশের উপজেলাতেই আমাদের প্রার্থীর একটি নির্বাচনী পথসভা ছিল এবং তারা বিষয়টি আমাদের জানানোর পর আমরা সেখানে নৌকায় ভোট দিতে মানুষজনকে আহ্বান জানিয়ে আসি। আমরা হেলিকপ্টার নিয়ে শাল্লায় যেহেতু যাইনি, তাই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়নি। আমরা নির্বাচনী সভায় যোগ দিতেই পারি। এতে কোনো বাধা নেই।

শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অলিউল হকের সভাপতিত্বে ওই জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অবনি মোহন দাস, শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন চৌধুরী, দলের প্রাথী মো. সাত্তার মিয়া, শাল্লা ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান জামান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সদস্য মাসুদ চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সোয়েব চৌধুরী, উপজেলা যুবলীগের নেতা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

শাল্লা উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ৫ জানুয়ারি ভোট গ্রহণ হবে। এর মধ্যে শাল্লা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন।