ঝিনাইদহে জিকে প্রকল্প

১০ গ্রামের ফসলের ক্ষতি

গত বৃহস্পতিবার ভোরে প্রধান খালের (ক্যানেল) চর-বাখরবা এলাকায় হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়।

জিকে সেচ প্রকল্পের খাল ভেঙে গেছে। এতে বসতবাড়িতে পানি ঢুকেছে। তলিয়ে গেছে ফসলের খেত। গতকাল ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার চর-বাখরবা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

পেঁয়াজ চাষ করে লোকসান হয়েছিল কৃষক জাহাঙ্গীর আলমের। চলতি মৌসুমে পাট ও ধান চাষ করে লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার আশা করেছিলেন। দুই বিঘায় পাট ও এক বিঘায় ধান চাষ করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই পাট ও ধানের খেত পানির নিচে। তাঁর ঘরেও উঠেছিল পানি। দুই দিন চুলায় হাঁড়ি চড়াতে পারেননি। বাইরে থেকে খাবার এনে খেতে হয়েছে। গতকাল শনিবার পানি নেমে যাওয়ায় বাড়িতে থাকতে পারছেন।

জাহাঙ্গীরের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নের চর-বাখরবা গ্রামে। গত বৃহস্পতিবার ভোরে জিকে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) সেচ প্রকল্পের ভেড়ামারা থেকে লাঙ্গলবাধ পর্যন্ত প্রধান খালের (ক্যানেল) চর-বাখরবা এলাকায় হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। পাড় ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে। এতে চর-বাখরবা গ্রামের শতাধিক পরিবারের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে জিকে সেচ প্রকল্পের একটি খাল শৈলকুপা লাঙ্গলবাধ পর্যন্ত চলে গেছে। এই ক্যানেলের এক পাড় দিয়ে পিচঢালা রাস্তা। এটি কুষ্টিয়া থেকে বেরিয়ে কাতলাগাড়ি-লাঙ্গলবাধ হয়ে মাগুরায় মিশেছে। গতকাল গিয়ে দেখা যায়, কাতলাগাড়ি বাজারসংলগ্ন চর-বাখরবা এলাকায় উত্তর পাশে খালের পাড় ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। দক্ষিণ পাড়ের কালভার্ট হয়ে চর-বাখরবা, পুরাতন-বাখরবা, ধুলিয়াপাড়া, খন্দকবাড়িয়া, গোয়ালবাড়িয়া, নবগ্রাম, ছোট-মৌকুড়ি, পাথরবাড়িয়াসহ পাশের ১০ গ্রামের ফসলি জমিতে পানি ঢুকছে।

জিকে সেচ প্রকল্পে খাল ভেঙে পানি ঢুকেছে লোকালয়ে। গতকাল শৈলকুপার চর-বাখরবা গ্রামে

স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল শেখ বলেন, বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টার দিকে হঠাৎ ভাঙন দেখা দেয়। হু-হু করে পানি উত্তরে গ্রাম ও দক্ষিণ মাঠে প্রবেশ করতে থাকে। পানির চাপে ভাঙন বাড়তে থাকে। এলাকার লোকজন কোনোভাবেই পানি ঠেকাতে পারেননি। প্রথম দিকে কলাগাছ দিয়ে পানি ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

চর-বাখরবা গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, দুই মাস আগে দক্ষিণের শাখা খালের মুখে ভাঙন দেখা দেয়। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা মেরামত করতে এলে তাঁরা ওই স্থান দেখিয়েছিলেন। কিন্তু কর্মকর্তারা তখন আমলে নেননি। এ কারণে এই ক্ষতি হলো।

ভাঙন এলাকার আরেক বাসিন্দা মাসুদ বিশ্বাস বলেন, গত মৌসুমে তিনি তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। তখনো খালের পানি ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে ফলন ভালো হয়নি। বিঘাপ্রতি ৬০ মণ পেঁয়াজ পাওয়ার কথা ছিল। সেখানে পেয়েছেন মাত্র ৩০ মণ। পেঁয়াজের দামও ছিল কম। আগের লোকসান সামাল দিতে এবার তিনি চার বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেন। পাটগাছগুলো দুই-তিন ফুট উঁচু হয়েছে। সেই খেতে পানি ঢুকেছে। অনেক স্থানে পাট পানির নিচে তলিয়ে আছে। পাট চাষেও লোকসান দিতে হবে তাঁকে।

এ বিষয়ে সারুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের মাহমুদুল হাসান বলেন, কৃষকের যে ক্ষতি হয়েছে, তা খুবই কষ্টদায়ক। একের পর এক ফসল চাষে লোকসান হচ্ছে তাঁদের। কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না তাঁরা। ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্তৃপক্ষের অবহেলা রয়েছে। তিন দিন আগে ভাঙন দেখা দিলেও এখনো তাদের কোনো উদ্যোগ নেই।

এ অবস্থায় কী পরিমাণ জমির ফসলের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সে বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আজগর আলী কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝিনাইদহ কার্যালয়ের শাখা কর্মকর্তা (শৈলকুপা) মো. তৌফিকুজ্জামান বলেন, ওই স্থানে ছিদ্র দেখা দিয়েছিল, এটা তাঁরা বুঝতে পারেননি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইতিমধ্যে ভাঙনের স্থান পরিদর্শন করেছেন। দ্রুতই বাঁধের কাজ শেষ করতে পারবেন।