'পছন্দের' গাড়ি কিনতে ৪৮ লাখ টাকা বাড়তি গুনছে বিমান
কর্মকর্তাদের ব্যবহারের জন্য ১২টি প্রাইভেট কার কিনতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এ জন্য চার দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্রে যে নমুনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে একটি কোম্পানি ছাড়া অন্য কেউই অংশ নিতে পারবে না। তবে নিজেদের পছন্দের এই কোম্পানির প্রাইভেট কার কিনতে হলে বিমানকে গুনতে হবে বাড়তি প্রায় ৪৮ লাখ টাকা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিমানের পরিচালনা পর্ষদ থেকে ভালো এবং উঁচু মানের গাড়ি কেনার কথা বলা হয়েছে। তবে দরপত্রে যে শর্ত দেওয়া হয়েছে, সেটি আমি জানি না। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।’
কেবল একটি কোম্পানি শর্ত পূরণ করতে পারায় প্রতিটি গাড়ি অতিরিক্ত ৪ লাখ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হবে। অন্য কোম্পানি কম দাম উল্লেখ করেও ওই শর্তটি পূরণ করতে না পারায় তারা বাদ পড়তে পারে।
বিমানের প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড লজিস্টিক শাখা থেকে ২০১৮ সালের ১৬ আগস্ট ৮টি প্রাইভেট কার কেনার জন্য প্রথমবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। সে সময় দরপত্র শিডিউল কিনেছিল তিনটি কোম্পানি। এগুলো হলো টয়োটা মোটরসের বাংলাদেশের পরিবেশক নাভানা লিমিটেড, বাংলাদেশে হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেডের এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর ডিএইচএস মোটরস লিমিটেড এবং মিতসুবিশি মোটরসের পরিবেশক র্যাংগস লিমিটেড। সেবার দরপত্র শিডিউলে প্রাইভেট কারের রং, দরজা, চাকার দৈর্ঘ্য, তেল ধারণের ক্ষমতা, ইঞ্জিনের কার্যক্ষমতা উল্লেখ করা হয়। গাড়িগুলোর প্রস্তুতকারী হিসেবে ১৩টি দেশের নাম উল্লেখ করা হয়। তবে শিডিউলে এসব শর্ত থাকায় বিমান কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে আপত্তি জানায় ডিএইচএস মোটরস লিমিটেড।
আপত্তিতে ডিএইচএস মোটরস লিমিটেড বলেছে, সরকারের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস অনুযায়ী কোনো পণ্যের ট্রেডমার্ক বা পণ্যের ব্যবসায়িক নাম, পেটেন্ট, নকশা বা ধরন, নির্দিষ্ট দেশের নাম, উৎপাদনকারী বা সেবা সরবরাহকারীর নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যাবে না। এ ছাড়া প্রাইভেট কারগুলোর কারিগরি নির্দেশনা হিসেবে ইঞ্জিন ৭৫ থেকে ৮০ মাত্রার ভ্যারিয়েবল ভালভ টাইমিং উইথ ইন্টেলিজেন্স (ভিভিটিআই) উল্লেখ করা হয়। বিমানের দরপত্রে এসব শর্ত কেবল একটি কোম্পানির প্রাইভেট কারই পূরণ করতে পারবে। তাই অন্য দুটি কোম্পানি বাদ পড়বে। এসব অভিযোগ করে ডিএইচএস দরপত্রে অংশ নেয়নি।
এ আপত্তির কারণে দরপত্র বাতিল করা হয়। এর তিন মাস পর ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করে বিমান। তখন শর্ত না জুড়ে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র শিডিউল কেনে ডিএইচএস মোটরস ও র্যাংগস লিমিটেড। এবার নাভানা লিমিটেড এতে অংশ নেয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিডিউল জমা দেওয়ার পর প্রাইভেট কার কেনার ব্যাপারে বিমানের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। তাই শিডিউল জমা দেওয়ার ৯০ দিন পেরিয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয় দফা দরপত্রের কার্যক্রম বাতিল হয়ে যায়।
এরপর চলতি বছরের ৭ আগস্ট তৃতীয়বারের মতো প্রাইভেট কার কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিমান। তৃতীয় দরপত্রে প্রথমবারের মতো গাড়ির নমুনা উল্লেখ করে শর্ত জুড়ে দেয় বিমান। একই সঙ্গে প্রাইভেট কারের সংখ্যা বাড়িয়ে ৮টির জায়গায় ১২টি করা হয়।
সবশেষ ৯ সেপ্টেম্বর চতুর্থবারের মতো দরপত্র আহ্বান করে বিমান। এবারও প্রথম দরপত্রের মতো প্রাইভেট কারগুলোর কারিগরি নির্দেশনা হিসেবে ইঞ্জিনে ৭৫ থেকে ৯০ মাত্রার ভ্যারিয়েবল ভালভ টাইমিং উইথ ইন্টেলিজেন্স (ভিভিটিআই) উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এভাবে দরপত্রে শর্ত দেওয়া হলে কেবল একটি ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলো বাদ পড়ে যাবে।
তিন দরপত্রে তিন ধরনের দাম
তৃতীয় দফা দরপত্র শিডিউলে সর্বোচ্চ দরদাতা নাভানা লিমিটেড। শিডিউলে তারা টয়োটা ইয়ারিস ২০১৯ মডেলের প্রতিটি প্রাইভেট কারের দাম চেয়েছে ৩৪ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। একই শিডিউলে র্যাংগস লিমিটেড প্রতিটি মিতসুবিশি এক্সপেন্ডারের দাম উল্লেখ করেছে ৩০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং ডিএইচএস মোটরস প্রতিটি হোন্ডা সিটি প্রাইভেট কারের দাম চেয়েছে ৩০ লাখ ৬৯ হাজার টাকা।
এর আগে দ্বিতীয় দরপত্রে অংশ নেওয়া দুটি কোম্পানির মধ্যে ডিএইচএস মোটরস হোন্ডা সিটি প্রাইভেট কারের দাম ২৯ লাখ ৯০ হাজার এবং র্যাংগসের মিতসুবিশি এক্সপেন্ডারের দাম ২৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
প্রথম দরপত্র শিডিউলে টয়োটা ইয়ারিসের দাম ছিল ৩৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা এবং মিতসুবিশির দাম ছিল ৩০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।
তবে তৃতীয় দফা দরপত্র শিডিউলে তিনটি কোম্পানির প্রাইভেট কারের উল্লেখিত মূল্যের সঙ্গে এর বর্তমান বাজারমূল্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে একটি টয়োটা ইয়ারিস কার ৩৩ লাখ, মিতসুবিশি এক্সপেন্ডার ৩১ লাখ এবং হোন্ডা সিটি কার ৩১ লাখ টাকায় কেনা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তৃতীয় দফা দরপত্রে গাড়ির নমুনায় ডুয়েল ভিভিটিআই-১ উল্লেখ করা হয়েছে। এর ফলে তিন মডেলের প্রাইভেট কারের মধ্যে বিমানের সর্বোচ্চ দরদাতা টয়োটার প্রাইভেট কার কেনার সম্ভাবনা বেশি।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, বিমানের পাইলট, ক্রুসহ ফ্লাইট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আনা-নেওয়া জন্য গাড়িগুলো কেনা হচ্ছে। বর্তমানে ভাড়া করা গাড়িতে এই কাজ চালানো হচ্ছে। এতে বিমানের আর্থিক ব্যয় অনেক বেশি হয়। এই ব্যয় কমাতে গাড়ি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
-
দিনাজপুরে ভোট গণনার পর দুই প্রার্থীর সমর্থকদের উত্তেজনা, পুলিশের গুলিতে নিহত ১
-
নতুন শিক্ষাক্রম ‘ভালো’, তবে বাস্তবায়নের প্রস্তুতিতে ঘাটতি
-
ঢাকাসহ ৫ জেলা: মাধ্যমিক কাল বন্ধ হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলাই থাকছে
-
ঢাকাসহ ৫ জেলার মাধ্যমিক স্কুল–কলেজ কাল বন্ধ ঘোষণা
-
ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের নিয়ে দপ্তরে উপাচার্য, শিক্ষকদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি