
নারী প্রার্থী কম হওয়ার পেছনে সাইবার বুলিং, ফেসবুকে নানা গ্রুপ, পেজ ও ভুয়া আইডি থেকে হেনস্তা করার মতো বিষয়গুলো কাজ করেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ২৩টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ২৪৭ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ২৬ জন। অর্থাৎ মাত্র ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের অংশ নেওয়ার এই হতাশাব্যঞ্জক চিত্রের নেপথ্যে সাইবার বুলিং (অনলাইন হেনস্তা), ব্যক্তিগত আক্রমণ, সম্মানহানির আশঙ্কা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বেশ কয়েকজন নারী শিক্ষার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত সাইবার বুলিংয়ের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় সরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক মৃত্তিকা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নারী শিক্ষার্থীরা মিছিলের সামনের সারিতে ছিলেন। কিন্তু আন্দোলনের পর আর নারী শিক্ষার্থীদের কেউ পাশে রাখেনি বা মনে রাখেনি। সেই সঙ্গে নারী শিক্ষার্থীদের নানাভাবে সাইবার বুলিং করা শুরু হলো। নির্বাচনের পরিবেশ না থাকায় এবং সাইবার বুলিংয়ের শঙ্কায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না।’ একই ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সাবেক সমন্বয়ক ফৌজিয়া নৌরিন।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী, রাকসুর ২৩টি পদের মধ্যে ১১টি পদে কোনো নারী প্রার্থী পাওয়া যায়নি। ভিপি পদে ১৮ জনের মধ্যে ১ জন, জিএস পদে ১৩ জনের মধ্যে ৪ জন, এজিএস পদে ১৬ জনের মধ্যে ২ জন, ক্রীড়া ও খেলাধুলা সম্পাদক পদে ৮ জনের মধ্যে ১ জন, সহসাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ৯ জনের মধ্যে ১ জন, সহকারী পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে ১৬ জনের মধ্যে ২ জন, নির্বাহী সদস্য পদে ৫৫ জনের মধ্যে ১ জন নারী প্রার্থী হয়েছেন। রাকসুতে ২৩ পদের মধ্যে ২টি পদ নারী শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর মধ্যে মহিলাবিষক সম্পাদক পদে ৬ জন এবং সহকারী মহিলাবিষয়ক সম্পাদক পদে ৮ জন প্রার্থী হয়েছে। সিনেট প্রতিনিধি পদে মোট প্রার্থী হয়েছেন ৫৮ জন। এর মধ্যে নারী প্রার্থী মাত্র ৮ জন, যা মোট প্রার্থীর ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
রাকসু নির্বাচনে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের অনিচ্ছার কারণ সম্পর্কে জানতে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন নারী অধ্যাপক ও কয়েকজন প্রার্থীর সঙ্গে। তাঁরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নারী প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি। নারী প্রার্থী কম হওয়ার পেছনে সাইবার বুলিং, ফেসবুকে নানা গ্রুপ, পেজ ও ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে হেনস্তা করার বিষয়গুলো কাজ করেছে। প্রশাসন সাইবার বুলিং রোধে সেল গঠন করেছে। কিন্তু এখনো ওই সেলের কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম লক্ষ করা যায়নি। ফলে এই নির্বাচনে বেশিসংখ্যক নারী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়নি।
রাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণে নারীদের নিরুৎসাহিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেসান আরা প্রথম আলোকে বলেন, এখন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ছবি-ভিডিও বানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে নারী প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।