
চট্টগ্রামের জনপ্রিয় লইট্টা মাছ এখানকার খাবারের এক প্রধান অনুষঙ্গ। জনপ্রিয়তার দিক থেকে লইট্টা ইলিশের সঙ্গে টেক্কা দিতে পারে। বাংলাদেশের মতোই ভারতের মুম্বাই ও যুক্তরাজ্যে লইট্টা মাছ সমান জনপ্রিয়। একবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাজ্যে লইট্টা মাছ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও ভোক্তাদের প্রতিবাদের মুখে তা আবার প্রত্যাহার করে। সুস্বাদু এই মাছের আহরণও বাড়ছে প্রতিবছর।
আমাদের এক পরিচিত বড় ভাই যেকোনো প্রসঙ্গে লইট্টা মাছ নিয়ে আলাপ জুড়ে দিতেন। হয়তো রাজনীতি নিয়ে কথা হচ্ছে, বড় ভাই চট করে বলতেন, ‘কথা সেটা নয়। আজ পাঁচ কেজি লইট্টা মাছ কিনলাম। সকালে তোমাদের ভাবি আর আমি মিলে কেটেকুটে রান্না করলাম।’
এখানেই শেষ নয়। রান্নার রেসিপিও গড় গড় করে বলে যেতেন তিনি। ‘পাঁচ কেজি লইট্টা মাছের জন্য কেজিখানেক পেঁয়াজ, অল্প রসুন, টমেটো কাঁচা মরিচ আর ধনেপাতা লাগবে। প্রথমে তেলে পেঁয়াজ লাল করে ভেজে নিতে হবে। এরপর বাকি মসলা হলুদ, লাল মরিচ, কাঁচা মরিচ দিয়ে কষিয়ে টমেটো দিতে হবে। কষানো শেষ হলে মাছ দিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। তেল উঠে এলে মাছ নিচে বসে যাবে। এরপর মাখনের মতো কেটে কেটে খাও।’ এসব বলতে বলতে বড় ভাইয়ের জিবে জল আসত। বারবার ঢোক গিলতে হতো। লোভনীয় লইট্টা মাছ যেন তাঁর সামনেই এনে রাখা হয়েছে।
কেবল এই পরিচিত বড় ভাই নন, চট্টগ্রামের মানুষ হলেই লইট্টা মাছের প্রতি আলাদা টান থাকবে। এ অঞ্চলের জনসংস্কৃতির ও খাদ্যের ইতিহাসের সঙ্গে মাছটি গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। পাশাপাশি দেশকালের সীমানা ডিঙিয়ে ভিনদেশিদের পাতেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লইট্টা।
চট্টগ্রামের লোকগীতি রচয়িতা প্রখ্যাত বাউলশিল্পী আব্দুল গফুর হালীর একটা গান আছে এমন, ‘চাটগাঁইয়া মাইনষে খায় দে/ আউল্লা চইলর ভাত/ লইট্টা মাছর নরম কেডা/ ন বাজে গলাত।’
লইট্টা মাছের শুঁটকি চাটগাঁয় যাকে ফুনি বলা হয়, তা আলু দিয়ে কিংবা কচুর লতি দিয়ে রান্না করলে আর কিছুর প্রয়োজন পড়ে না। তাজা মাছের পাশাপাশি লইট্টা শুঁটকিও সারা বছরই খাওয়া হয়। লইট্টা মাছের নির্দিষ্ট কোনো মৌসুম নেই। তবে বর্ষার পর শীতের শুরুতে বেশি ধরা পড়ে বলে জেলে জানান। এ সময় দামও কিছুটা কম থাকে এ মাছের।
চট্টগ্রামে লইট্টা মাছ ভুনা অথবা রসা রান্না দুটোরই প্রচলন আছে। ভুনা মাছে কোনো ধরনের ঝোল থাকে না। অপর দিকে রসা রান্নায় ঝোল থাকবে। তবে সব ধরনের রান্নায় পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, টমেটো, আদাবাটা, মরিচ ও হলুদ আবশ্যক।
অনেককে বলতে শুনেছি, কাঁচাবাজার একটা অঞ্চলের মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। বাজার ঘুরেই বোঝা যায় মানুষগুলো কেমন। চট্টগ্রামের বাজারে গেলেও এমন অভিজ্ঞতা হতে পারে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, লইট্টা মাছ নিয়ে যাঁরা বসেন, তাঁদের অনেকেই ক্রেতাদের বিচিত্র কথায় প্রলুব্ধ করেন। একবার এক মাছওয়ালাকে বলতে শুনেছি, ‘ওবা লই য, রসগুল্লা রসগুল্লা।’
এই রসগোল্লার লোভে ক্রেতারাও হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ভুনা বা রসা রান্না কিংবা ঝুরি ভাজি সব রকমেই লইট্টা অতুলনীয়। আবার দামটা সস্তার পাঙাশ মাছের চেয়েও কম।
চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক গানে পাওয়া গেল, ‘ইলিশ মাছর তিরিশ কেডা/ লইট্টা মাছর লাল দাঁড়ি/ আঁর ভাবিয়ে মরিচ বাডের/ কেইল লাড়ি লাড়ি।’ লইট্টা মাছের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দৈনন্দিন জীবনের এই ছবিই বলে দেয় মাছটি চট্টগ্রামের আবহমান খাদ্য সংস্কৃতিতে কত বড় জায়গা ধারণ করে আছে।
চট্টগ্রামে লইট্টা মাছ ভুনা অথবা রসা রান্না দুটোরই প্রচলন আছে। ভুনা মাছে কোনো ধরনের ঝোল থাকে না। অপর দিকে রসা রান্নায় ঝোল থাকবে। তবে সব ধরনের রান্নায় পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, টমেটো, আদাবাটা, মরিচ ও হলুদ আবশ্যক।
চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক গানে পাওয়া গেল, ‘ইলিশ মাছর তিরিশ কেডা/ লইট্টা মাছর লাল দাড়ি/ আঁর ভাবিয়ে মরিচ বাডের/ কেইল লাড়ি লাড়ি।’ লইট্টা মাছের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দৈনন্দিন জীবনের এই ছবিই বলে দেয় মাছটি চট্টগ্রামের আবহমান খাদ্য সংস্কৃতিতে কত বড় জায়গা ধারণ করে আছে।
কক্সবাজারের রেস্তোরাঁগুলোর অন্যতম জনপ্রিয় মেনু লইট্টা ফ্রাই। ডিম, মসলা, ময়দার বেসন মাখিয়ে ডুবোতেলে ভেজে তৈরি হয় এই ফ্রাই। খেতে লা জবাব।
এর বাইরেও পশ্চিমবঙ্গে লইট্টা মাছের ঝুরি ভাজা বেশ জনপ্রিয়। এই ঝুরি ভাজার আগে হালকা তেলে ভেজে মাছের কাঁটা খুলে নিতে হয়। এরপর টমেটো, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, মসলা দিয়ে ভালোমতো রান্না করলে শুকনা ঝুরি ভাজা তৈরি হয়ে যাবে। ঝাল ঝাল ঝুরি ভাজা দিয়ে অনায়াসেই দুই-তিন প্লেট ভাত খাওয়া হয়ে যাবে।
চট্টগ্রামবাসী ছাড়া এই উপমহাদেশের আরও একটি শহরে লইট্টা মাছ ভীষণ জনপ্রিয়। শহরটি হলো ভারতে অর্থনীতি ও চলচ্চিত্রের প্রাণকেন্দ্র মুম্বাই। বেশ কয়েক বছর আগে মুম্বাই গিয়ে সেখানকার বাজারগুলোতে চট্টগ্রামের মতোই ঝুড়িভর্তি লইট্টা মাছ নিয়ে বিক্রেতাদের বসে থাকতে দেখেছি। মাছটিকে মারাঠি ভাষায় বোম্বিল নামে ডাকা হয়। আর ইংরেজি নাম ‘বোম্বে ডাক’। কেন বোম্বে ডাক নাম হলো, অন্তর্জালে সে তথ্য খুঁজতে গিয়ে চোখে পড়ে বিবিসির সাংবাদিক মেহের মির্জার একটি লেখায়।
মারাঠি মাছ বিক্রেতারা রাস্তায় ‘বোমিলতাক’ বলে হেঁকে হেঁকে লইট্টা মাছ বিক্রি করতেন। উচ্চারণ না করতে পেরে ইংরেজ বাসিন্দারা তার নাম দিয়েছেন ‘বোম্বে ডাক’। সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন ব্রিটিশ ভারতীয় পারসি লেখক ফারুখ ধোন্ডি। ফারুকের মতে, মুম্বাইয়ের সাগরে ধরা পড়া লইট্টা মাছ শুঁটকি হয়ে ডাক বিভাগের গাড়িতে করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ত। বোম্বের ডাক বিভাগের গাড়িতে আসে বলে মাছটির নামও হয় বোম্বে ডাক।
২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি প্রকাশিত ওই লেখায় মেহের জানাচ্ছেন, মারাঠি মাছ বিক্রেতারা রাস্তায় ‘বোমিলতাক’ বলে হেঁকে হেঁকে লইট্টা মাছ বিক্রি করতেন। উচ্চারণ না করতে পেরে ইংরেজ বাসিন্দারা তার নাম দিয়েছেন বোম্বে ডাক।
সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন ব্রিটিশ ভারতীয় পারসি লেখক ফারুখ ধোন্ডি। ফারুকের মতে, মুম্বাইয়ের সাগরে ধরা পড়া লইট্টা মাছ শুঁটকি হয়ে ডাক বিভাগের গাড়িতে করে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ত। বোম্বের ডাক বিভাগের গাড়িতে আসে বলে মাছটির নামও হয় বোম্বে ডাক।
মুম্বাইয়ের পারসি জনগোষ্ঠীর মধ্যে লইট্টা মাছের অন্য রকম কদর আছে। অনেক পারসির পদবি আছে বুমলা। বুমলা লইট্টা মাছেরই পারসি নাম। এ ছাড়া পারসিদের অনেক জনপ্রিয় গান কবিতাও রয়েছে লইট্টা মাছ নিয়ে।
মুম্বাই শহরের ফাইভ গার্ডেনস নামের পারসি কলোনিতে যেকোনো রেস্তোরাঁয় ঢুঁ মারলেই লইট্টা মাছের জনপ্রিয় পদ পাওয়া যাবে। খারা বুমলা নামের একটি পারসি ডিশ বেশ জনপ্রিয়। ফ্রাই করা মাছ। ওপরে মুচমুচে ভেতরে নরম।
এ ছাড়া অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা লইট্টা শুঁটকির গুঁড়ো ব্যবহার করে বিভিন্ন রান্নায়। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান রান্নায় তাই লইট্টা মাছ অতি অপরিহার্য এক পদ।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির তথ্য অনুযায়ী মুম্বাইয়ে পারসিদের মধ্য দিয়েই ব্রিটিশদের রান্না ঘরে পৌঁছায় লইট্টা মাছ। ১৭৯৫ সালে পারসি ব্যবসায়ী কাওয়াসজি শেঠ প্রায় আধা টন শুকনা লইট্টা শুঁটকি উপহার দেন তখনকার বোম্বের ইংরেজ গভর্নরকে। ব্রিটিশ কর্মকর্তারা পরে ভারত থেকে সেটি বিলেতে নিয়ে যান। অনেকেই এই স্বাদ আর ভুলতে পারেননি।
বিবিসি জানাচ্ছে, ব্রিটিশরা গড়ে প্রতিবছর ১৩ টন করে লইট্টা মাছ খেয়ে থাকেন। সেখানে ভাজা লইট্টা মাছ ও লইট্টা মাছের শুঁটকি জনপ্রিয় খাবার। তবে ১৯৯৬ সালে ভারত থেকে আমদানি হওয়া লইট্টা মাছে ক্ষতিকর সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন জনপ্রিয় এই মাছ আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর সে দেশে শুরু হয়, ‘সেভ বোম্বে ডাক’ নামের প্রচারণা।
যুক্তরাজ্যের হেরেফোর্ড শহরের ব্যবসায়ী ডেভিড ডেলানি ছিলেন এই প্রচারণার অগ্রভাগে। নিজ উদ্যোগে চার বছর ধরে এই খাবারটি ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন চালান তিনি। তাঁর এই প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত সফল হয়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে আবেদনও করেন। সংসদ সদস্যদের কাছে চিঠি লেখেন এবং এমনকি একটি ওয়েবসাইটও চালু করেন।
অবশেষে ইইউ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্যাকেজিংয়ের শর্তে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ওই খবর ২০০০ সালের ১২ ডিসেম্বর ‘বোম্বে ডাক বাউন্স ব্যাক’ শিরোনামে প্রকাশ করে বিবিসি।
কথায় আছে আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারি। লইট্টা মাছের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারেই উল্টো। কুৎসিত দর্শন বিশাল মুখ, হালকা গোলাপি রঙের জেলির মতো এই মাছ অনেকের অপছন্দের। তার ওপর বেশ তীব্র আঁশটে গন্ধ আছে এর।
তবে স্বাদের দিক থেকে যেমন, তেমনি পুষ্টিগুণের দিক দিয়েও অনন্য এই মাছ। লিজার্ড জাতীয় এই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম হারপাডন নিহারিয়াস (Harpadon nehereus)। নিহারিয়াস থেকে লইট্টা মাছের আরেক নাম হয়েছে নিহারি মাছ। সাধারণত ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হয় মাছটি। বঙ্গোপসাগর, আরব সাগরসহ এশিয়ার বিভিন্ন উপকূলে লইট্টা মাছ ধরা পড়ে।
ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ লইট্টা মাছ হৃদ্রোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। এ ছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, লৌহ ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। যার কারণে যাঁরা হাড়ের সমস্যা এবং রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য এই মাছ উপকারী।
কয়েক বছর ধরে লইট্টা মাছের আহরণ (উৎপাদন) বাড়ছে বাংলাদেশে। মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এক দশক আগেও গড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন লইট্টা মাছ ধরা পড়ত এ দেশের জেলেদের জালে। এখন তা বেড়ে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।
সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের পরিচালক ড. মঈন উদ্দীন আহমদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে মাছের আহরণ বাড়ার পেছনে। আগের তুলনায় মাছ ধরাও বেড়েছে। পাশাপাশি সরকারের ২২ দিন ও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাও এ ক্ষেত্রে প্রভাব রাখতে পারে।
লইট্টা মাছ বেশি ধরা পড়লেও এখন এই মাছ আর আগের মতো অতটা সস্তা নেই। দুই-তিন বছর আগেও ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হতো প্রতি কেজি লইট্টা মাছ। তবে এখন দাম বেড়েছে। চট্টগ্রামের বাজারগুলোতে বর্তমানে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এই মাছ।
মানুষের বিনাশী কর্মকাণ্ডের কারণে সমুদ্রে বাড়ছে প্লাস্টিক দূষণ। এ কারণে লইট্টা মাছও দূষণের কবলে পড়েছে।
২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর প্রথম আলোয় এ নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রাম ও সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন গবেষক তাঁদের গবেষণায় লইট্টা মাছের পাকস্থলীতে প্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছেন। এই পাকস্থলীসহ শুঁটকি করা হয় বলে রান্নার সময় সে অংশ ফেলে না দিলে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। দেশে প্লাস্টিক ব্যবহার ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এই সমস্যা দূর করা কঠিন বলে জানান গবেষকেরা।