প্রথম আলো সব সময় সত্য প্রকাশে অবিচল থাকে। এ জন্য যে সরকারই আসুক, তারা প্রথম আলোকে শত্রু মনে করে। তবে চাপের মুখেও প্রথম আলো সত্য প্রকাশে পিছপা হয়নি, মাথা নত করেনি। কেননা সত্যই সাহস। প্রথম আলো দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা বলে যাচ্ছে নিয়মিত। প্রথম আলোর প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস আছে, থাকবে।
প্রথম আলোর ২৭তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ সোমবার খাগড়াছড়িতে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন। অনুষ্ঠানে আসা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রথম আলো সম্পর্কে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন, দেন নানা পরামর্শ।
খাগড়াছড়ির বাজার ফান্ড প্রশাসকের কার্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত সমাবেশে রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, লেখক, সাংস্কৃতিক কর্মী, উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের লোকজন, নারী অধিকারকর্মী, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জয়ন্তী দেওয়ান।
সুধী সমাবেশে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মং সার্কেলের প্রধান রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম আলো জন্মলগ্ন থেকে আমাদের পরিবারের সদস্য। সকালে এসে হকার পত্রিকা দিয়ে যেত। অনেক স্মৃতি প্রথম আলো নিয়ে।’
মং সার্কেলের প্রধান বলেন, ‘প্রথম আলো পার্বত্যাঞ্চল নিয়ে, আদিবাসীদের অধিকার নিয়ে লেখালেখি করে চলছে। পার্বত্যাঞ্চলের ধর্ষণ, ভূমি দখল ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে প্রথম আলো সাহসী ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করছে। এ জন্য প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে ধন্যবাদ।’
খাগড়াছড়ির জেলা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ প্রথম আলোর সঙ্গে স্মৃতি রয়েছে জানিয়ে বলেন, ‘প্রথম আলো প্রথম রঙিন দুই পাতায় খেলার সংবাদ প্রকাশ করে। তখন বিভিন্ন খেলোয়াড়ের ছবি ছাপা হতো। সেসব ছবি কেটে ঘরের দেয়ালে টানিয়ে রাখতাম।’
বস্তুনিষ্ঠ ও সাহসী সাংবাদিকতার কারণে তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে সবার কাছে প্রথম আলো জনপ্রিয় উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপার বলেন, প্রথম আলো বস্তুনিষ্ঠ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। একটি সংবাদ যেভাবে প্রকাশিত হওয়া উচিত, প্রথম আলো ঠিক সেভাবে প্রকাশ করে। প্রথম আলো সমাজের অন্ধকারের দিকগুলো তুলে ধরবে। ২৭ বছর নয়, প্রথম আলো ২৭০ বছর টিকে থাকুক।
প্রথম আলোর সঙ্গে ছোটবেলা থেকে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে জানিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) ও পৌর প্রশাসক হাসান মারুফ বলেন, প্রথম আলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছোটবেলা থেকে। প্রথম আলোর ক্রোড়পত্র আলপিনের মাধ্যমে এই সম্পর্ক হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এই সম্পর্ক গাঢ় হয়েছে। এখনো তা অটুট আছে। তিনি বলেন, প্রথম আলো দেশে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার ধারা তৈরি করেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
সত্য প্রকাশে অবিচল থাকার কারণে সব সরকারই প্রথম আলোকে শত্রু মনে করে বলে উল্লেখ করেন খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ পুলক বরণ চাকমা। তিনি বলেন, ‘প্রথম আলোর সঙ্গে একধরনের পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। একসময় এই পত্রিকায় লিখেছি। এখানে প্রকাশিত সম্পাদকীয় পাতার লেখা মনোযোগ আকর্ষণ করে, চিন্তার খোরাক জোগায়। আবার পড়াশোনা পাতা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তা–ই নয়, পড়াশোনা শেষ করা তরুণদের জন্যও দিশা হয়ে আছে প্রথম আলো। কেননা তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। একই সঙ্গে প্রথম আলো দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা বলে যাচ্ছে নিয়মিত।’
অনুষ্ঠানে উপজাতীয় শরণার্থীবিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাশেদুল হক বলেন, প্রথম আলো শুরু থেকে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই ধারা অব্যাহত থাকবে। প্রকাশের পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলে প্রথম আলো সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক। এখনো সে অবস্থান ধরে রেখেছে। ভবিষ্যতেও সর্বাধিক পাঠকপ্রিয় পত্রিকা হিসেবে টিকে থাকবে।
খাগড়াছড়ি উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শ্রীলা চাকমা বলেন, ‘প্রথম আলো প্রকাশের পর থেকে ঘরে অন্য কোনো পত্রিকা রাখিনি। প্রথম আলো এক দিন না দেখলে শান্তি লাগে না। এই পত্রিকা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। তাই প্রথম আলো বারবার পড়তে ইচ্ছা করে।’ তিনি বলেন, প্রথম আলোর পাতায় পাতায় যা প্রকাশিত হয়, তাতে জানার আছে অনেক কিছু। প্রথম আলোয় প্রকাশিত সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য, অনুপ্রেরণামূলক সংবাদ তরুণদের এগিয়ে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর হেড অব নিউজ (চট্টগ্রাম ডেস্ক) আশরাফ উল্লাহ বলেন, শুরু থেকে প্রথম আলোর লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস, সত্য প্রকাশ এবং কারও প্রতি পক্ষপাত না থাকা। প্রথম আলো সব সময় সে লক্ষ্য পূরণ করেছে। প্রথম আলোর যাত্রাপথে সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে পাঠকদের আস্থা ও ভালোবাসা। পাঠক প্রথম আলোর ওপর ভরসা রেখেছে। তাই বিভিন্ন সময়ের চাপের মুখে থাকলেও কখনো সত্য প্রকাশে পিছপা হয়নি।
গত বছর গণ–আন্দোলনের সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বাংলাভাষী মানুষ সত্য জানার জন্য প্রথম আলোর ওপর আস্থা রেখেছিলেন বলে অনুষ্ঠানে জানান আশরাফ উল্লাহ। তিনি বলেন, প্রথম আলো ওই সময় সাহসের সঙ্গে সত্য সংবাদ প্রকাশ করেছে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে প্রথম আলোর বিভিন্ন দিক নিয়ে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। পরে পাঠকের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
সুধী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার, জেলা জামায়াতের আমির সৈয়দ আবদুল মোমিন, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মাহফুজ, অধ্যাপক মধু মঙ্গল চাকমা, সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাধন কুমার চাকমা, নারী নেটওয়ার্কের সভাপতি জয়া ত্রিপুরা, সচেতন নাগরিক কমিটির খাগড়াছড়ির সভাপতি বেলা রানী দাশ, খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি তরুণ কুমার ভট্টাচার্য, এনসিপির খাগড়াছড়ি জেলার প্রধান সমন্বয়ক মনজিলা ঝুমা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সহযোগী হিসেবে ছিল গাইরিং হোটেল।