‘বিকট শব্দটা শুনেই শৌচাগার থেকে বের হয়েছিল নাবিল। কিন্তু দরজা পেরোতেই আগুনের গোলা এসে ঝলসে দেয় ওর শরীর। এরপর সব যেন অন্ধকার’। রাজধানীর উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় কিশোর নাবিল হাসানের আহত হওয়ার বিষয়ে এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন তার বোন নাসরিন সুলতানা।
নাবিল হাসান উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। আজ সকালে মুঠোফোনে তার বড় বোন নাসরিন সুলতানা জানায়, দুর্ঘটনার সময় নাবিল স্কুলের শৌচাগারে ছিল। সেটি শ্রেণিকক্ষ থেকে কিছুটা দূরে। বিকট শব্দ শোনার পর নাবিল শৌচাগার থেকে বের হয়। শরীর ঝলসে যাওয়ার পর একজন শিক্ষিকা নাবিলকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় ওই শিক্ষিকাও দগ্ধ হয়েছেন।
ঘটনার দিন বেলা ১টা ১০ মিনিটে স্কুল থেকে ফোন পাই। একজন শিক্ষিকা স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে জানিয়ে বলেন—আপনার ছেলের অবস্থা ভালো নেই। এ কথা শোনার পরেই আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। মুহূর্তেই স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে স্কুলে ছুটে গেছি।নিজাম উদ্দিন, নাবিলের বাবা
নাবিলের বোন নাসরিন সুলাতানাও মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই শিক্ষিকা দগ্ধ হওয়ার পরেও অন্য শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে ছুটে যান। আর নাবিল নিজেই একটি রিকশা নিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে গেছে। তবে ওই হাসপাতালে যাওয়ার পরপরই জ্ঞান হারায় সে’।
নাবিলের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হারামিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি ওই এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নাবিলই সবার ছোট। বাবা ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা সবাই উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে থাকেন।
জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার দিন বেলা ১টা ১০ মিনিটে স্কুল থেকে ফোন পাই। একজন শিক্ষিকা স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে জানিয়ে বলেন—আপনার ছেলের অবস্থা ভালো নেই। এ কথা শোনার পরেই আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। মুহূর্তেই স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে স্কুলে ছুটে গেছি।’
নাবিলের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হারামিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি ওই এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে নাবিলই সবার ছোট। বাবা ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা সবাই উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরে থাকেন।
নিজাম উদ্দিন আরও বলেন, ‘অনেকেই জানিয়েছেন আমার ছেলে পোড়া শরীর নিয়ে একা রিকশায় উঠে হাসপাতালে গিয়েছে। তখন তার শরীরে কোনো পোশাক ছিল না—সব পুড়ে গেছে। ছেলের এমন সাহসিকতায় আমি অভিভূত, গর্বিতও। পরে ওকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।’
গতকাল মঙ্গলবার সন্দ্বীপের হারামিয়া ইউনিয়নে নাবিলের গ্রামের বাড়িতে গিয়েও দেখা যায় স্তব্ধতা। স্বজনেরা জানান, মঙ্গলবার নাবিলকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে গেলেও তার অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল। বাড়িতে থাকা নাবিলের চাচি আমেনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নাবিল খুবই হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত ছেলে। ওর এমন অবস্থার খবর শুনে সবাই কেঁদে ফেলেছে।’
নাবিলের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাবা নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ সকালে ড্রেসিং করানো হয়েছে। সে এখন একটু একটু কথা বলছে। সবাই আমার ছেলের জন্য দোয়া করবেন’।