কুষ্টিয়ায় ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। বুধবার শহরের দিশা টাওয়ারের মিলনায়তনে
কুষ্টিয়ায় ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা। বুধবার শহরের দিশা টাওয়ারের মিলনায়তনে

কুষ্টিয়ায় গোলটেবিল বৈঠক

রাজনীতিতে নারীদের এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ঐকমত্য

রাজনীতিতে নারীদের এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে একমত হলেও চিন্তার ভিন্নতা আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে। বিএনপির নেতারা বলছেন, নারী নেতৃত্বের বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছে তাদের দল। মূল প্রার্থী তালিকায় যোগ্যদের রাখার বিষয়ে দলের চিন্তাভাবনা আছে। আর ইসলামি দলগুলোর নেতাদের বক্তব্য, শুধু কোটায় নয়, নারীরা নিজেদের যোগ্যতায় রাজনীতিতে এগিয়ে আসবেন।

কুষ্টিয়ায় ‘জেলা পর্যায়ের সংলাপ: অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্যে উঠে আসে এমন অভিমত।

আজ বুধবার সকালে কুষ্টিয়ার দিশা টাওয়ারের মিলনায়তনে এ গোলটেবিল বৈঠক হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় একশনএইডের নেতৃত্বে মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই গোলটেবিল বৈঠকের প্রচার সহযোগী হিসেবে আছে প্রথম আলো।

গোলটেবিল বৈঠকে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাকির হোসেন সরকার বলেন, ‘১৯৯১ সালসহ পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জাতীয় নির্বাচনগুলো ভালো হয়েছে। এরপর আর হয়নি। নির্বাচন কমিশনকে সবাই মিলে সহযোগিতা করতে হবে। পিআর পদ্ধতি হলে স্ট্যাবল সরকার হবে না। আমাদের দেশে এটা হবে না। যদি করতে হয়, তবে আগামী সরকার গঠনের পর আলোচনা হতে পারে। যোগ্য নারীদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে।’

কুষ্টিয়ায় ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলছেন এক অতিথি। বুধবার শহরের দিশা টাওয়ারের মিলনায়তনে

সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল নেতা-কর্মীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচন এগিয়ে আসছে। এ সময়ে সব ধরনের গুজব থেকে দূরে থাকতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াতে বা বক্তব্যে যেন মিথ্যা তথ্য দেওয়া বা কারও চরিত্রহরণ করা না হয়।’

জামায়াতে ইসলামীর কুষ্টিয়ার সেক্রেটারি সুজা উদ্দীন জোয়ার্দ্দার বলেন, নারীরা তাঁদের যোগ্যতায় আসবেন। আলাদা কোটা নয়, যোগ্যতায় আসার পক্ষে তাঁরা। বিদ্যমান যে আইন আছে, সেটাও হতে পারে। ভোটার প্রতি নির্বাচনী ব্যয় কিছুটা বাড়ানোর ব্যাপারে তিনি মত দেন। জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমাদের দলে কুষ্টিয়ায় প্রার্থী দেওয়ার মতো যোগ্য নারী নেই। তবে অনেক নারী কর্মী আছেন। ব্যক্তিগত আক্রোশ সোশ্যাল মিডিয়াতে এমনভাবে প্রচার হচ্ছে, তাতে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সবাইকে নিয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখতে হবে।’

আওয়ামী লীগসহ যারা ফ্যাসিবাদী, তারা যেন কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে মত দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক নয়ন আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘নারীদের জন্য ৩০ শতাংশ কেন আরও বেশি অংশগ্রহণ রাখতে চাই। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং কালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভালো নির্বাচন দেখতে চাই। রাজনৈতিক দলগুলোর সহনশীলতা থাকতে হবে এবং প্রতিযোগিতা থাকতে হবে।’

ইসলামী আন্দোলনের কুষ্টিয়া শাখার সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নাগরিকেরা প্রশ্ন করে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে? এ জন্যই স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হওয়া দরকার ছিল। জাতীয় নির্বাচনে রাষ্ট্রযন্ত্রকে যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি চাই। তাহলে কেউ ব্যক্তিগত টাকা খরচ করতে পারবে না। নারী-পুরুষ সমান যোগ্যতা নিয়ে এগিয়ে আসবে।’

ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা জানান, তাঁদের দলে নারী ইউনিট গঠন করা হয়েছে। প্রার্থী থাকবে কি না, ঠিক করা হয়নি।

কুষ্টিয়ায় ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলছেন এক অতিথি। বুধবার শহরের দিশা টাওয়ারের মিলনায়তনে

সিপিবির কুষ্টিয়া জেলা শাখার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গোলাম রব্বানী বলেন, সব নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। পেশিশক্তিমুক্ত, প্রভাবমুক্ত ও কালোটাকার যেন না ব্যবহৃত হয়। যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিতে হবে।

পেশিশক্তি নির্বাচনে সবচেয়ে বড় বাধা উল্লেখ করে বাসদের জেলা শাখার সদস্যসচিব আশরাফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে সংখ্যালঘু ও নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে দুটি চ্যালেঞ্জ থাকে। ভোটের সময় সংখ্যালঘুরা চরম চাপের মুখে থাকেন। ভোটের সময় তারা কীভাবে চাপমুক্ত থাকবেন সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এটা নিয়ে ভাবতে ও গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থের খেলা বন্ধ করতে হবে। নির্বাচনে ধর্মের ব্যবহার যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সোচ্চার থাকতে হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা শাখার সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো যাতে তাঁদের প্রার্থী তালিকায় ৩০ শতাংশ নারী প্রার্থী রাখেন।

কুষ্টিয়া সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সহসভাপতি শাহাজাহান আলী বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে একটা উৎসবমুখর নির্বাচন যেন হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। নারীদের অন্তত ৪০ শতাংশ অংশগ্রহণ থাকতে হবে। নারীর অবস্থান অনেক ওপরে। নারীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

কুষ্টিয়ায় ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতকরণে নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে কথা বলছেন এক অতিথি। বুধবার শহরের দিশা টাওয়ারের মিলনায়তনে

নিকুঞ্জ নারী উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক ফেরদৌসী বেগম বলেন, ভোটকেন্দ্রগুলো যেন প্রতিবন্ধীবান্ধব হয়। তাঁদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রগুলোতে ভোটকক্ষগুলো যাতে নিচতলায় হয়। সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

আলোচনা পর্বের শুরুতে নাগরিক সমাজ সংস্থাগুলোর দেওয়া জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রত্যাশাবিষয়ক সুপারিশপত্র উপস্থাপন করেন কুষ্টিয়া সিএসও হাবের সভাপতি মিজানুর রহমান। প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একশনএইডের উইমেন রাইটস লিড মরিয়ম নেছা।

এ ছাড়া বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসান। জেলা সংলাপের এ আয়োজনে শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে মুক্তি নারী ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মমতাজ আরা বেগম বলেন, ‘সুন্দর একটা নির্বাচন হোক। আমরা সুন্দর নির্বাচন দেখতে চাই।’