জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) সভাপতি ও জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। আহত জুলাই যোদ্ধা ও চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের কাছে এ বিষয়ে লিখিত আবেদন করেন।
তাঁর আবেদনের অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির কাছেও পাঠানো হয়েছে।
লিখিত আবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট হাটহাজারী মডেল থানাধীন হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড গোলচত্বরে ছাত্র–জনতার ওপর গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় হাটহাজারী থানায় একটি হত্যা মামলা হয়। মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয় সাবেক সংসদ সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে। তিনি চট্টগ্রাম–৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং স্বৈরাচারী সরকারের একজন সক্রিয় সহযোগী হিসেবে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
আবেদনকারীর দাবি, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এখনো গ্রেপ্তার হননি। বরং পলাতক অবস্থায় থেকেও তিনি ও তাঁর অনুসারীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদী ও সাক্ষীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এতে নিহতের পরিবারসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। একটি স্বাধীন ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্রে এভাবে প্রকাশ্যে একজন হত্যা মামলার আসামির ঘুরে বেড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আবেদনে আরও বলা হয়, আনিসুল ইসলামের বিরুদ্ধে নগরের ডবলমুরিং, হাটহাজারী ও কোতোয়ালি থানায় আরও তিনটি মামলা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওমর ফারুক আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের মূল চেতনা ছিল ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। খুনের মামলার আসামিরা যদি বিনা বিচারে পার পেয়ে যায়, তাহলে তা শহীদদের আত্মত্যাগের অবমাননা হবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারও প্রশ্নের মুখে পড়বে। তাই একজন আহত জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে আনিসুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের জন্য লিখিত আবেদন করেছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের (এনডিএফ) সভাপতি ও জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ও আমার পরিবারের জুলাই অভ্যুত্থানে কী ভূমিকা রেখেছি, সবাই জানে। আমার পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওই সময় গণমাধ্যমে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা বন্ধের আবেদন করা হয়েছিল বিজ্ঞাপন দিয়ে। আমি কোনো হত্যা, মামলায় জড়িত নই।’
চট্টগ্রাম জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গণমাধ্যম) মো. রাসেল প্রথম আলোকে বলেন, কোন ঘটনায় কোন আসামি জড়িত, তা তদন্ত কর্মকর্তার তদন্তে ও সাক্ষ্য–প্রমাণে উঠে আসে। আনিসুল ইসলাম জড়িত থাকলে তদন্ত কর্মকর্তা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
উল্লেখ্য, এর আগে গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে জেলার হাটহাজারীর গুমানমর্দন এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ জন ব্যক্তি ব্যক্তিগত গাড়ি ও মাইক্রোবাসে করে আনিসুল ইসলামের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। তবে ওই সময় তিনি ও তাঁর পরিবারের কেউ বাড়িতে ছিলেন না। হামলাকারীদের হাতে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা ছিল এবং মুখে ছিল মাস্ক। তারা বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়ে ঘরের আসবাব তছনছ করে। একপর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে বাড়ির সামনে থাকা একটি প্রাইভেট কার পুড়ে যায়।