
সামান্য পুঁজি আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে লাউ চাষে সফল হয়েছেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার কৃষক সমীর চন্দ্র। মাত্র ৩২ শতাংশ জমিতে লাউয়ের চারা রোপণ করে ইতিমধ্যে তিনি ৪০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। মাচায় থাকা লাউ আরও ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তাঁর।
উপজেলার ছৈলাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা সমীর চন্দ্র। তাঁর পরিবারে স্ত্রী ও দুই সন্তান। ছেলে বিশ্বজিৎ স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে এবং মেয়ে বনানী দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করেন। সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে চেষ্টার কমতি নেই এই কৃষকের।
সমীর চন্দ্র বলেন, তাঁর নিজের তেমন চাষের জমি নেই। সে জন্য স্থানীয় মনির হোসেন নামের এক ব্যক্তির পরিত্যক্ত বাড়ির সামান্য জমি লিজ নিয়ে লাউ চাষ শুরু করেন। উঁচু–নিচু ওই জমিতে অন্যান্য ফসল ভালো হয় না। তাই বর্ষা মৌসুমে লাউয়ের চাষ করেছেন। পরিশ্রম ও সঠিক পরিচর্যার ফলে ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে শুধু জৈব সার দিয়ে উৎপাদিত লাউয়ের চাহিদাও আছে স্থানীয়দের কাছে।
কৃষক সমীর চন্দ্র বলেন, ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা ও সংসার চালাতেই মূলত এই উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। বীজ, সার ও মাচায় মাত্র ১০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। একই মাচা ব্যবহার করে বর্ষায় দুইবার লাউ চাষ করে যে লাভ হয়েছে, তাতে তিনি খুশি। এই লাভ তাঁর পরিবারে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। লাউয়ের জন্য ব্যবহৃত এই একই জমিতে তিনি শীতের সময়ও চাষাবাদ চালিয়ে যাবেন। লাউ ছাড়াও এই জমিতে বেগুন, টমেটোসহ নানা জাতের শাকসবজির চাষ করার পরিকল্পনা আছে তাঁর। সে জন্য বীজ বুনে চারা তৈরি করে রেখেছেন।
শনিবার সকালে সমীর চন্দ্রের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি মাচা থেকে লাউ সংগ্রহ করছেন বাজারে নেওয়ার জন্য। খেতের কাছেই তাঁর বসতঘর। ঘরের সামনে পরীক্ষামূলকভাবে ২৫টি বস্তায় আদা চাষ করেছেন। আর কিছুদিন গেলেই আদা তুলতে পারবেন। অন্য পাশে গোয়ালঘরের সামনে ৪টি চাঁড়িতে কেঁচো চাষ করে সার তৈরি করছেন খেতে ব্যবহারের জন্য। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সারও বিক্রি করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা জিয়ায়ুর রহমান বলেন, সমীর চন্দ্র একজন আদর্শ কৃষক। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রমী মানুষ। এলাকায় বিষমুক্ত সবজি, নানা রকম ফসল ফলিয়ে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারেও বিক্রি করেন। তিনি প্রমাণ করেছেন, ছোট পরিসরেও সঠিক পরিকল্পনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে কৃষিতে সফলতা অর্জন করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সমীর চন্দ্রের মতো কৃষকেরা আমাদের সম্পদ। তাঁর সাফল্য দেখে অন্য কৃষকেরাও উৎসাহিত হচ্ছেন। আমরা তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি।’