
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় পাহাড়ের ঢালে ১১০ শতক জমি বর্গা নিয়ে ধারদেনা করে বোরো আবাদ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম (৪৮)। ফলন ভালো হয়েছে। ধান পাকতে শুরু করেছে। ফসল কাটতে আরও ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে। তবে গত সপ্তাহে ৫০-৫৫টি বন্য হাতির একটি দল হানা দিয়ে জাহাঙ্গীরের ২০ শতক জমির ধান খেয়ে ও মাড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দিনমজুরি করে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে অভাবে কোনো রহম সংসার চলে। ৪ কাঠা জমির (২০ শতক) ধান হাতি খাইয়া শেষ কইরা দিচ্ছে। বাকি ফসল রক্ষা করবার না পাইলে সারা বছর সংসার লইয়া বিপদে পরুন লাগবো।’
হাতির আক্রমণ থেকে বাকি ফসল রক্ষায় ১১ দিন ধরে জাহাঙ্গীর আলম অন্য কৃষকদের সঙ্গে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। নির্ঘুম রাত কাটায় জাহাঙ্গীর দিনের বেলায় কাজে যেতে পারছেন না। কেবল জাহাঙ্গীর নন, তাঁর মতো উপজেলার সীমান্তবর্তী মায়াঘাঁসি, পানিহাটা, তারানি ও ফেকামারী গ্রামের দেড় শতাধিক প্রান্তিক কৃষক আছেন এমন সমস্যায়।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘হাতির যেন কোনো ক্ষতি না অয়, আগর ফসলেরও যেন কোনো ক্ষতি না অয়। বিষয়ডা বিবেচনা কইরা সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নিলে পাহাড়ি কৃষকগর বিরাট উপকার অইতো।’
ওই এলাকায় দায়িত্বে থাকা ময়মনসিংহ বন বিভাগের গোপালপুর বিট কর্মকর্তা মো. আবদুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, ৫০-৫৫টি হাতির দলে ৬-৭টি শাবক আছে। ১৪ এপ্রিল থেকে মায়াঘাঁসি ও ফেকামারি জঙ্গলে হাতির দলটি অবস্থান করছে। দিনের বেলায় জঙ্গলে থাকলেও প্রায় প্রতি রাতেই খাবারের খোঁজে ফসলের মাঠে নেমে আসছে। গ্রামবাসী, বন বিভাগের লোকজনসহ এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের সদস্যরা আলো জ্বালিয়ে, হইহুল্লোড় করে হাতির দলটিকে জঙ্গলে ফিরিয়ে দিতে কাজ করছেন।
বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৪ এপ্রিল রাতে সীমান্তের জঙ্গল ছেড়ে উপজেলার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের মায়াঘাঁসি ও ফেকামারি জঙ্গলে চলে আসে হাতির পালটি। দিনের বেলা খাবারের জন্য বিভিন্ন টিলায় ঘোরাঘুরি করলেও শেষ বিকেলে হাতির পালটি বোরো ধানের খেতে হানা দিতে লোকালয়ে নেমে আসে। গত ১১ দিনে পানিহাটা, মায়াঘাঁসি ও ফেকামারী গ্রামের ২০ থেকে ২৫ জন কৃষকের প্রায় তিন একর জমির আংশিক ফসল হাতির দলটি খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছে। এ সময় গ্রামবাসী আগুন জ্বালিয়ে হইহুল্লোড় করে ফসলের মাঠ থেকে হাতির দলটিকে জঙ্গলে ফিরিয়ে দেন। স্থানীয় কৃষকদের উদ্যোগে ফসল রক্ষায় বিভিন্ন টিলায় ছয়টি ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে। এই ছাউনিতে গ্রামবাসী পালা করে দিনে ও রাতে হাতি পাহারা দিচ্ছেন।
বন বিভাগের কর্মকর্তা মো. আবদুল বারী প্রথম আলোকে বলেন, হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বন বিভাগের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে বলা হয়েছে। তাঁদের সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বন্য হাতির দলটিকে কেউ যেন বিরক্ত করতে না পারে, সে জন্য তাঁরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানান।