
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় বাবার অমানবিক নির্যাতনের শিকার চার বছরের এক শিশুকে তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর শিশুটিকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তাকে নিজেদের হেফাজতে নেন। শিশুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন, রুগ্ণ শরীর ও চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের চাপ।
এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, ছেলেশিশুটির বাবা মাদকাসক্ত ও বখাটে। বছর তিনেক আগে শিশুটির মা–বাবার বিচ্ছেদ হয়। তখন শিশুটিকে মা নিয়ে গেলেও কয়েক মাস পর জোর করে ফিরিয়ে আনেন বাবা। এর পর থেকেই শিশুটিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন বাবা। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ছেলেকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে যেতেন তিনি। কাঁদলে হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে মারধর করতেন। দিনের বেশির ভাগ সময় তালাবদ্ধ করে অনাহারে কাটাতে হতো শিশুটিকে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাওন মিয়া বলেন, ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদলেও শিশুটিকে খাবার দেওয়া হতো না। কান্নাকাটি করলে মারধর করতেন বাবা। বিষয়টি একটি সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে পুলিশকে জানানো হয়। পরে পুলিশ এসে শিশুটিকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) মো. হাসিনুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, শিশুটিকে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তালাবদ্ধ ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাদকাসক্ত বাবা নিজের সন্তানের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। শিশুর বাবাকে আটকের চেষ্টা চলছে।
শিশু সুরক্ষা সমাজসেবাকর্মী তাছলিমা আক্তার প্রথম আলোকে জানান, শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। নির্যাতন ও খেতে না পাওয়ার কারণে সে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। শিশুটি যেহেতু কথা বলতে পারে না, তাই পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে নিয়ে যেতে হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাছলিমা শিরিন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটির চিকিৎসা ও সুরক্ষার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যেহেতু শিশুর মা–বাবা রয়েছেন, তাই আদালতের আদেশে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।