
নেত্রকোনার কলমাকান্দা থেকে উদ্ধার হওয়া বনরুইটি বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) মহাবিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষিত প্রাণীটিকে এখন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। দ্রুত প্রাণীটিকে আবাসস্থল বা উপযুক্ত এলাকায় অবমুক্ত করা হবে।
স্থানীয় পরিবেশ ও বন্য প্রাণী রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেভ দ্য অ্যানিমেলস অব সুসং’-এর স্বেচ্ছাসেবীরা গতকাল শনিবার রাতে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছে বনরুইটি হস্তান্তর করেন। এর আগে শুক্রবার রাতে কলমাকান্দার খারনৈ ইউনিয়নের কচুগড়া গ্রামের বাবুল মিয়ার বাড়ি থেকে প্রাণীটিকে উদ্ধার করেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
বন বিভাগের দুর্গাপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার রাতে স্বেচ্ছাসেবীরা বিরল প্রজাতির একটি বনরুই তাঁদের কাছে নিয়ে আসেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে গতকাল রাতে স্বেচ্ছাসেবীদের উপস্থিতিতে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের দুই কর্মকর্তার কাছে প্রাণীটি হস্তান্তর করা হয়।
জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বনরুই বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। সেভ দ্য অ্যানিমেলস অব সুসংয়ের স্বেচ্ছাসেবীরা প্রাণীটি উদ্ধার করে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করায় তাঁদের ধন্যবাদ। প্রাণীটিকে এখন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী সময় আবাসস্থল বা উপযুক্ত ভালো জায়গায় প্রাণীটিকে অবমুক্ত করা হবে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সভাপতি রিফাত আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গোপন সংবাদের মাধ্যমে তাঁরা জানতে পারেন, পাহাড়ি সীমান্তবর্তী গ্রামে মহাবিপন্ন একটি বনরুই ধরা পড়েছে। পরে বাবুল মিয়াকে খুঁজে বের করেন। কিন্তু তিনি পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন। এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তির শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রাণীটি উদ্ধার করা হয়। বেশি দামে বিক্রি বা চোরাচালানের জন্য তিনি প্রাণীটিকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় কৌশল করে প্রাণীটিকে উদ্ধার করা হয়। এবারই প্রথম তাঁরা বনরুই উদ্ধার করেছেন।
কচুগাড়া গ্রামের হাদিস মিয়া বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় সময় বিভিন্ন ধরনের বন্য প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু এমন অদ্ভুত আকৃতির প্রাণী আগে কখনো দেখেননি। প্রাণীটির দুই হাতে বড় বড় নখ। মুখ ও নাক অনেক লম্বাটে। পিঠের অংশ মাছের আঁশের মতো। পরে জানতে পেরেছেন, এটি মহাবিপন্ন প্রাণী, নাম বনরুই।
নেত্রকোনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও বন্য প্রাণী গবেষক মো. নুরুল বাসেত প্রথম আলোকে বলেন, বনরুইকে ইংরেজিতে চায়নিজ পেনগলিন বলা হয়। বনরুই একধরনের স্তন্যপায়ী সরীসৃপ প্রাণী। রুই মাছের মতো সারা শরীরে আঁশ থাকায় ‘বনরুই’ নামে পরিচিত। আইইউসিএন ইতিমধ্যে মহাবিপন্ন হিসেবে প্রাণীটিকে ‘লাল তালিকাভুক্ত’ করেছে। বনরুই গহিন বনে ১০-১৫ ফুট গভীর সুড়ঙ্গ করে বসবাস করে। এরা নিশাচর ও লাজুক প্রকৃতির। গভীর রাতে খাবারের খোঁজে সুড়ঙ্গ থেকে বাইরে বের হয়। ভোরের আগেই সুড়ঙ্গে ঢুকে যায়। পিঁপড়া, পিঁপড়ার ডিম ও উইপোকা বনরুইয়ের প্রধান খাবার। বনরুই বছরে একবার বাচ্চা দেয়। পায়ের নখ ও পাতা খুবই শক্তিশালী।