বাবার ইচ্ছা পূরণে নববধূকে হেলিকপ্টারে করে বাড়িতে নিয়ে গেলেন বর

হেলিকপ্টারে বর-কনেকে একনজর দেখতে শহর-গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজন ভিড় জমান। আজ দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম মাঠে
ছবি: সংগৃহীত

নেত্রকোনা থেকে কুড়িগ্রামে বিয়ে করতে এসেছিলেন হরিজন যুবক অপু বাঁশফোড় (২৭)। গতকাল মঙ্গলবার রাত দুইটার দিকে কনের বাড়িতে বিয়ে সম্পন্ন হয়। আজ বুধবার সকালে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা দেড়টার সময় নববধূকে হেলিকপ্টারে উড়িয়ে নিয়ে যান বর। বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে হেলিকপ্টারে বিয়ের এ আয়োজন বলে জানিয়েছেন বর অপু বাঁশফোড়। শুধু তা–ই নয়, পুরো বিয়ের ভিডিও ড্রোনে বসানো ক্যামেরা দিয়ে ধারণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় সাড়া পড়ে গেছে।

আজ দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম মাঠ থেকে নববধূকে নিয়ে নেত্রকোনা যাওয়ার সময় স্টেডিয়ামে ছিল মানুষের উপচে পড়া ভিড়। হেলিকপ্টারে বর-কনেকে একনজর দেখতে শহর-গ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার লোকজন ভিড় জমান। সিনেমায় দেখলেও বাস্তবে এ ধরনের ঘটনা আগে দেখেননি বলে জানান হরিজন সম্প্রদায়সহ বিয়ে দেখতে আসা লোকজন।

কুড়িগ্রাম জেলা হরিজন যুব সম্প্রদায় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জয়কুমার বাঁশফোড় বলেন, ‘গতকাল রাতে কুড়িগ্রাম এলজিইডি বস্তির হরিজনপল্লির বাসিন্দা ভুট্টু বাঁশফোড়ের তৃতীয় মেয়ে সনিতা রানী বাঁশফোড়ের সঙ্গে নেত্রকোনা শহরের জয়নগর হাসপাতাল এলাকার দিলীপ বাঁশফোড়ের ছোট ছেলে অপু বাঁশফোড়ের বিয়ে সম্পন্ন হয়। আজ নববধূকে নিজ বাড়িতে নিতে বর হেলিকপ্টার ভাড়া করেন। রংপুর বিভাগে আমাদের সম্প্রদায়ে এমন করে কোনো বিয়ে আগে হয়নি। আমরা নবদম্পতির সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করি।’

হেলিকপ্টারে বিদায়ের মুহূর্তে বর অপু বাঁশফোড় ও কনে সনিতা রানী বাঁশফোড়। আজ দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম মাঠে

বরের ভগ্নিপতি কাঞ্চন বাঁশফোড় বলেন, ‘আমার বাসা কুড়িগ্রাম জেলা শহরের মজিদা কলেজ–সংলগ্ন পুরোনো রেলস্টেশন বস্তি এলাকায়। আমার শ্যালক অপু বাঁশফোড় আমাকে বিয়ের জন্য কনে দেখার কথা বললে আমি তার জন্য ভুট্টু বাঁশফোড়ের মেয়েকে দেখাই। কনে পছন্দ হয় ছেলের পরিবারের। পারিবারিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে গতকাল রাতে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বর অপু বাঁশফোড় নেত্রকোনায় পাঠশালা ব্যান্ড দলে কাজ করে এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) হিসেবে নেত্রকোনায় সরকারি চাকরি করে। আজ হেলিকপ্টারে করে তার নববধূকে নিয়ে সে নেত্রকোনায় চলে যায়।’

আমার মতো গরিব মানুষের মেয়ে বিয়ে করে হেলিকপ্টারে শ্বশুরবাড়ি যাবে, এটা স্বপ্নের মতো লাগছে।
ভুট্টু বাঁশফোড়, কনের বাবা

বর অপু বাঁশফোড় বলেন, ‘আমার বাবার স্বপ্ন ছিল হেলিকপ্টারে ছেলের বউকে বাড়িতে নিয়ে আসবেন। দুই বছর আগে বাবা মারা যান। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে অনেক দিন ধরে অর্থ সংগ্রহ করে আসছি। আমার পরিবারও সহযোগিতা করেছে। ঘণ্টায় ৮০ হাজার টাকা করে ৩ ঘণ্টার জন্য হেলিকপ্টারটি ভাড়া করা হয়েছে। হেলিকপ্টারে বিয়ে করে বউ নিয়ে নেত্রকোনায় যাচ্ছি। বেশ ভালো লাগছে।’

কনের বাবা ভুট্টু বাঁশফোড় বলেন, ‘আমরা বাহে গরিব মানুষ। দুই পরিবারের সম্মতিতে পারিবারিক আলোচনার মাধ্যমে আজ মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হলো। আজ ছেলের পরিবার হেলিকপ্টারে এসে মেয়েকে নেত্রকোনা নিয়ে গেল। আমার মতো গরিব মানুষের মেয়ে বিয়ে করে হেলিকপ্টারে শ্বশুরবাড়ি যাবে, এটা স্বপ্নের মতো লাগছে।’

স্টেডিয়াম মাঠে হেলিকপ্টার দেখতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলায় হেলিকপ্টারে করে বিয়ে এর আগে কোনো দিন দেখি নাই। মানুষের ইচ্ছা ও শখ থাকলেই তবে এই স্বপ্নপূরণ সম্ভব।’