
নির্বাচনে যারা কোটি কোটি টাকার মনোনয়ন–বাণিজ্য করতে পারবে না, তারাই সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি ঠেকাতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, সব দলের প্রতিনিধিত্বের মধ্য দিয়ে একটি অংশীদারির সংসদ হলে তারা কর্তৃত্ববাদী শাসন চালাতে পারবে না।
জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ পাঁচ দাবিতে রংপুরে আয়োজিত জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার এসব কথা বলেন। রংপুর মহানগর ও জেলা জামায়াতের উদ্যোগে আজ শুক্রবার বেলা আড়াইটার দিকে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
জামায়াতের দাবিগুলো হলো—জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; ফ্যাসিবাদী সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘বিএনপি পিআর মানতে চায় না। টানা ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না মানতে চায় না। সাংবিধানিক পদগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছামাফিক নিয়োগ বাদ দিতে আলাদা নিয়োগ কর্তৃপক্ষ হবে, সব জায়গায় এটা তাঁরা মানতে চান না। এসব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তাঁরা আপত্তি করছেন। পিআর তাঁরা এই জন্য মানতে চান না, কারণ যখন দলকে নির্বাচিত করা হয় তখন ব্যক্তির কোনো স্বার্থ থাকে না। এতে কোনো ব্যক্তি কালোটাকা, মাস্তানি, পেশিশক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে কারচুপি করতে কেন যাবে?’
দেশের মানুষ পিআর বোঝে না—বিএনপির কিছু নেতা এমন বলছেন বলে মন্তব্য করেন মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা বলছি, অধিকাংশ মানুষ পিআর চায় কি না তা গণভোটে মতামত গ্রহণ করুন। আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কথা দিচ্ছি, অধিকাংশ মানুষ যদি পিআরের পক্ষে ভোট দেয়, আপনাদেরও মানতে হবে। অধিকাংশ মানুষ না মানলে আপনাদের সিদ্ধান্ত মেনে নেব।’
পিআর প্রশ্নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) সংবিধান দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, ‘সংবিধান আমাদের কাছে বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা। প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই জুলাই আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন।’ সিইসির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সাহস থাকলে গণভোট দেন। জনগণের রায়ের প্রতি আমরা শ্রদ্ধা রাখি। মনে রাখবেন, গায়ের জোরে দেশ শাসনের দিন শেষ হয়ে গেছে।’
জামায়াতের পাঁচ দফা দাবি জনগণের আকাঙ্ক্ষা উল্লেখ করে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘এই দাবির ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গত ৫ আগস্ট জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দাঁড়িয়ে জুলাই ডিক্লারেশনের নামে জুলাই ঘোষণা তিনি দিয়েছিলেন, সেখানে তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন, বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থার দুর্নীতিগ্রস্ত ও দলীয়করণের ধ্বংসপ্রাপ্ত সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে সংস্কার করা হবে। আমরা সেই সংস্কারকাজে সরকারকে সাহায্য করছি। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি, সেই সংস্কারের জন্য ঐকমত্য কমিশনের প্রচেষ্টার সামনে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন না করে যদি বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোতে আবার নির্বাচন হয়, আরেকটি হাসিনার জন্ম হবে। আরেকটি ফ্যাসিবাদের জন্ম হবে। বাংলার মানুষ তা হতে দেবে না।’
রংপুর মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা এ টি এম আজম খানের সভাপতিত্বে সমাবেশ আরও বক্তব্য দেন মহানগরের সাবেক আমির অধ্যাপক মাহবুবার রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী প্রমুখ। পরে পাঁচ দফা দাবিতে পাবলিক লাইব্রেরি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে নগরের শাপলা চত্বরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।