
বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীদের ছোটাছুটি। কেউ খেলছে। কেউ বা দৌড়াচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পায়ে-পায়ে উড়ছে ধুলাবালু। সেই সঙ্গে উড়ছে পোস্টার ও প্রচারপত্র। ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ রোববার দুপুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। গতকাল শনিবার এ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে একটি শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটের পর থেকেই নোংরা হয়েছে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে টাঙানো হয়েছে ব্যানার ও পোস্টার। বিলি করা হয়েছে বিভিন্ন প্রতীকের ছাপানো ছোট-ছোট প্রচারপত্র। নির্বাচন শেষে এসব পোস্টার, প্রচারপত্র ও ব্যানার ময়লা-আবর্জনা হয়ে পড়ে আছে বিদ্যালয়ের মাঠে।
এ বিষয়ে আজ বেলা ১টার দিকে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আখতারা পারভীন বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশে স্কুলের মাঠ ও অবকাঠামো ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অনুমতিপত্রের প্রথম শর্তই ছিল, আয়োজন শেষে বিদ্যালয় আগের মতো পরিষ্কার করে দেবে। কিন্তু তারা কেন এখনো তা করছে না।
গতকাল বিদ্যালয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি, কাভার্ড ভ্যান ও পিক আপ শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ১৭টি পদের বিপরীতে ৪৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সংগঠনটির ৫ হাজার ৯০ জন সদস্য ভোট দেন। ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সব প্রার্থী বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে, বিদ্যালয়ের ভেতরে ও বাইরে ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে ফেলেন। সেই সঙ্গে প্রার্থীদের পক্ষে ছাপানো বিভিন্ন প্রচারপত্র বিলি করা হয়। যার বেশির ভাগই বিদ্যালয়ের মাঠ ও আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে।
আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রচারপত্র ও বিভিন্ন কাগজের স্তূপ দেখা গেছে। সেখানে কাগজ কুড়াচ্ছিল মারুফ আহমেদ নামে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। মারুফ বলে, ‘গতকাল ভোট ছিল। আজ স্কুলে এসে দেখি, গোটা স্কুল ময়লা-আবর্জনায় ভরা। দেখতে খুবই খারাপ লাগছে।’
আলাপকালে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর হাসান জানায়, স্কুল ব্যবহার করে অনুষ্ঠান করবে, ঠিক আছে। কিন্তু মাঠ তো পরিষ্কার করে দিতে হবে। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর স্কুলে ও মাঠে ময়লা-আবর্জনা, খাবারের প্যাকেট, ঠোঙা, প্লাস্টিক পড়ে থাকে। এগুলো আয়োজকদেরই পরিষ্কার করে দেওয়া দরকার ছিল।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় বড় মাঠে কোনো আয়োজন হলেই মাঠ পরিষ্কারের কাজ করেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েস ও তাঁর সহযোগী একদল শিক্ষার্থী। মো. কায়েস বলেন, বড় মাঠ হলো ঠাকুরগাঁওবাসীর মিলনকেন্দ্র। ছোট-বড় সবাই এখানে এসে সময় কাটান। অনেকেই খেলাধুলা করেন। এই মাঠ ঘিরেই আয়োজন হয় নানা অনুষ্ঠান। কিন্তু আয়োজনের পরের দিন দেখা যায়, মাঠ ময়লা-আবর্জনায় ভরা। কিন্তু এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যাঁরা অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন, তাদেরই দায়িত্ব মাঠ পরিষ্কার করে দেওয়া।
নির্বাচন উপলক্ষে ভোটার ও ভোট পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ১১০টি হাঁড়িতে ৪২ জন বাবুর্চি রান্নার কাজ করেছেন। এর পর তা প্যাকেট করে ভোটার ও নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সরবরাহ করা হয়েছে। মাঠের পশ্চিম পাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে পড়ে আছে খাবারের প্যাকেট, নেট ও পানির বোতল। আবার কোথাও পড়ে আছে খাবারের উচ্ছিষ্ট। বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীরা ব্যাডমিন্টন খেলছে। তাদের পায়ে-পায়ে উড়ছে ধুলা। আরও উড়ছে ছোট ছোট প্রচারপত্র।
নির্বাচনে সভাপতি পদে ভুট্টু মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক পদে আবদুল জব্বার বিজয়ী হয়েছেন। নির্বাচন পরিচালনার প্রধান দায়িত্বে ছিলেন ঠাকুরগাঁও পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম। এ বিষয়ে জানতে তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ধরেননি।