বগুড়া জেলার মানচিত্র
বগুড়া জেলার মানচিত্র

বগুড়ায় রোগনির্ণয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভুল প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগে নারীর সংবাদ সম্মেলন

বগুড়ার একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রের (ডায়াগনস্টিক সেন্টার) ভুল আলট্রাসনোগ্রাফি প্রতিবেদনের (রিপোর্ট) কারণে দ্বিতীয় দফা অ্যাপেন্ডিসাইটিসের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এক নারী। প্রয়োজন না থাকলেও অস্ত্রোপচার করায় তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন।

শিমু আকতার নামের ওই নারী একজন স্কুলশিক্ষক ছিলেন। আজ সোমবার বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাঁকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার বগুড়া শাখার ভুল প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাচ্ছেন না।

তবে এই সংবাদ সম্মেলনকে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন ইবনে সিনা বগুড়া শাখার ব্যবস্থাপক শওকত আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীর অভিযোগ নিয়ে দুই দফা তদন্ত হয়েছে। প্রথম দফা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে মাস তিনেক আগে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগকারী, অভিযুক্ত দুজন চিকিৎসক এবং ইবনে সিনার পক্ষ থেকে তিনি অভিযোগ খণ্ডন করে লিখিত বক্তব্য দেন। এরপর মাসখানেক আগেও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে গঠিত আরেকটি তদন্ত কমিটি অনুরূপভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগেই অভিযোগকারীর সংবাদ সম্মেলন করাটা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ন করার শামিল। আলট্রাসনোগ্রাফি প্রতিবেদন ভুল ছিল কি না, সেটা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে জানা যাবে। প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

বগুড়া শহরেরর বাসিন্দা শিমু আকতার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পেটে ব্যথাজনিত সমস্যা নিয়ে গত বছরের ১৬ মার্চ শহরের একজন চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই চিকিৎসক তাঁকে আলট্রাসনোগ্রাফি করার পরামর্শ দেন। ২১ মার্চ তিনি শহরের ওই রোগনির্ণয় কেন্দ্রে আলট্রাসনোগ্রাফি করেন। সেখানে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কথা উল্লেখ করা হয়।

২০০৩ সালে তিনি অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচার করেছিলেন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী আরও অভিযোগ করেন, পরে তিনি গত বছরের ২৬ মার্চ বগুড়া শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (সার্জন) আবদুল হালিমের কাছে অ্যাপেন্ডিসাইটিস অস্ত্রোপচার করেন। অস্ত্রোপচারে ওই চিকিৎসক কোনো অ্যাপেন্ডিক্স পাননি।

সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী আরও বলেন, ভুল প্রতিবেদনের কারণেই দ্বিতীয় দফা তাঁকে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। এতে তাঁর শরীরে বড় ক্ষত হয়েছে। এ ঘটনায় গত বছরের ২৮ নভেম্বর তিনি ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এ বছরের ৪ মার্চ জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এতেও কাজ না হওয়ায় পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি এ ঘটনার স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান।

জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের কনসালট্যান্ট আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, শহরের একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্র থেকে দেওয়া আলট্রাসনোগ্রাফি প্রতিবেদনে ওই নারীর অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। শহরের বেসরকারি একটি ক্লিনিকে বিনা মূল্যে তিনি অস্ত্রোপচার করেন। পরে নিশ্চিত হন, ওই নারীর অ্যাপেন্ডিসাইটিস ছিল না।

সদ্য যোগ দেওয়া বগুড়ার সিভিল সার্জন এ কে এম মোফাখখারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কেউ তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ করে থাকলে ওই রোগনির্ণয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।