
কুমিল্লা নগরের অধিকাংশ ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা ফুরিয়ে গেছে। বিভিন্ন প্রয়োজনে নগদ অর্থ না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকেরা। ব্যাংকগুলোয় চলমান ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে নগদ অর্থ প্রাপ্তির একমাত্র মাধ্যম বুথে বুথে ঘুরেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তাঁরা।
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কুমিল্লা নগরের একাধিক এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের অন্তত ১৫টি এটিএম বুথ ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের বুথে টাকা থাকলেও নিজেদের গ্রাহক ছাড়া সেবা দিচ্ছে না।
এটিএম বুথগুলোয় দায়িত্বরত কর্মীরা বলছেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫ থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত চলছে টানা ১০ দিনের ছুটি। এই ছুটির সময় ব্যাংকগুলোও বন্ধ আছে। ফলে নগদ টাকা তোলার একমাত্র ভরসা এটিএম বুথ। এ সময় মানুষের নগদ টাকার বাড়তি চাহিদা জোগান দিতে গিয়ে নগরের বেশির ভাগ এটিএম বুথের টাকা ফুরিয়ে গেছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা বলছেন, অনেক সময় দশটি ব্যাংকের এটিএম বুথে ঘুরেও টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু বেসরকারি ব্যাংকগুলোই নয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর এটিএম বুথেরও একই অবস্থা।
গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে নগরের মনোহরপুর এলাকার সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও টাকা নেই। নিরাপত্তাকর্মী ছগির আহমেদ গ্রাহকদের সেই কথা মনে করিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন। ছগির বলেন, সকাল ১০টার দিকে টাকা লোড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গ্রাহকদের চাপ বেশি হওয়ায় বিকেলের মধ্যেই সব টাকা শেষ।
নগরের কান্দিরপাড় এলাকার নিউমার্কেটের সামনে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ও যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথ আছে। গতকাল রাতে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি বুথই টাকাশূন্য। সেখানেও নিরাপত্তাকর্মীরা গ্রাহকদের টাকা নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন। যমুনা ব্যাংকের বুথের নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘ঈদের পরদিন থেকেই এটিএম বুথে টাকা নেই। নতুন করে টাকা লোড দেওয়া হয়নি। আমি এটিএম বুথ পাহারা দিচ্ছি।’
নগরের পুলিশ লাইনস এলাকায় অবস্থিত ইস্টার্ন ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা তোলার জন্য যান নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তবে তিনি অন্য ব্যাংকের গ্রাহক হওয়ায় ওই বুথ থেকে টাকা তুলতে পারেননি। নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে নজরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার এক নিকটাত্মীয়কে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। জরুরি ভিত্তিতে টাকার দরকার, কিন্তু এটিএম বুথগুলোয় টাকা নেই। এখন পর্যন্ত পাঁচটি ব্যাংকের বুথ ঘুরে এসেছি। সব বুথই টাকাশূন্য।’
নগরের অন্তত দশটি ব্যাংকের এটিএম বুথ ঘুরেও টাকা তুলতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন মাদ্রাসাশিক্ষক আবুল কালাম। সর্বশেষ কুমিল্লা রেলস্টেশনে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথে গিয়েও খালি হাতে ফিরেছেন। আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোথাও টাকা নেই, প্রতিটি বুথেই দেখেছি মানুষের টাকার জন্য দুর্ভোগ। এই বুথ, সেই বুথ ঘুরে ২০০ টাকা রিকশাভাড়া দিলাম। শেষ পর্যন্ত টাকা তুলতে পারলাম না।’
প্রতিবছর দুই ঈদের আগে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দেয়, ব্যাংক ছুটির মধ্যে গ্রাহকের নগদ টাকার চাহিদা মেটাতে এটিএম বুথগুলো সার্বক্ষণিক সচল রাখতে হবে, যাতে গ্রাহকেরা অর্থের সংকটে না পড়েন। তবে টানা বন্ধে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকেরা। এবারও একই চিত্র দেখা গেছে।