
সূর্যের আলো যেদিক পড়বে, ‘সোলার ট্র্যাকার’ নামের যন্ত্রটি সেদিকেই ঘুরে যাবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেই আলো শুষে নেবে যন্ত্রটি। সহজেই উৎপাদন করা যাবে বিদ্যুৎ। বিকাশ-বিজ্ঞানচিন্তা বিজ্ঞান উৎসবে নেভি অ্যাঙ্করেজ স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী আরাফাত বিন আজম নিয়ে এসেছিল এই ‘ট্র্যাকার’।
বিজ্ঞান উৎসবের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পর্বে তার বানানো ট্র্যাকারটি সবার নজর কাড়ে। বিচারকের চূড়ান্ত বিচারে আরাফাত প্রথম পুরস্কার জিতে নেয়। আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম নগরের জাকির হোসেন রোডের ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে শুরু হয় এই উৎসব।
বেলুন উড়িয়ে ও জাতীয় সংগীত এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। এতে নিজেদের উদ্ভাবন করা প্রজেক্ট নিয়ে এসেছিল প্রায় ১৫০ শিক্ষার্থী। আর কুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় ৩০০ শিক্ষার্থী। সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে উৎসব প্রাঙ্গণ।
প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মেদ লামান রাশীদ শাহিদী ও কাজী মোহাম্মদ তাওসীফুল ওয়ারা প্রথমবারের মতো বিজ্ঞান উৎসবে অংশ নিয়েছে। তারা জানায়, বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে তাদের আগ্রহ রয়েছে। এ কারণে অংশ নিয়েছে।
অতিথিরা যা বললেন
উদ্বোধনী আয়োজনে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ভেন্যুপ্রধান আহমেদ শাহীন আলরাজী এ আয়োজনে অংশ হতে পেরে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানান।
বিকাশ লিমিটেডের রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট সায়মা আহসান বলেন, ‘বিজ্ঞানের চর্চা বাড়াতে হবে। অজানাকে জানতে হবে। বর্তমান যুগে অন্যান্য দেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত হচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। সে লক্ষ্যেই বিকাশ এ ধরনের আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।’
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. লুৎফর রহমান শিক্ষার্থীদের নানা পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘তোমাদের সামনে অফুরন্ত সুযোগ। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে এখনই নিজেদের গড়ে তোলো। বিজ্ঞানমনস্ক হও।’
উদ্বোধনী পর্বে আরও উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, বিজ্ঞানচিন্তার নির্বাহী সম্পাদক আবুল বাসার।
কুইজ ও প্রজেক্টে মাতোয়ারা সবাই
উদ্বোধনী পর্ব শেষে অনুষ্ঠিত হয় কুইজ প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি প্রজেক্ট নিয়ে আসা শিক্ষার্থীরাও অতিথি ও বিচারকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিনদীদ হোসাইন ‘স্মার্ট ব্রিজ’ নিয়ে হাজির হয়। সে জানায়, অনেক সময় সেতুর নিচে ময়লা-আবর্জনা জমে যায়। এতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু সে এমন একটি সেতুর মডেল তৈরি করেছে, যেটি ময়লা-আবর্জনা জমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওপরে উঠে যাবে। সিনদীদের মডেলটিও বিচারকদের নজর কেড়েছে। সে পেয়েছে দ্বিতীয় পুরস্কার। এতে সে দারুণ খুশি।
এটি ছাড়াও পরিবেশ, কৃষি, বিদ্যুৎ, রোবটসহ নানা প্রজেক্ট নিয়ে শিক্ষার্থীরা এসেছিল। সেখান থেকে সেরা ১০টি প্রজেক্ট বেছে নেওয়া হয়। দেওয়া হয় পুরস্কার। এসব প্রজেক্ট জাতীয় পর্যায়ে প্রতিযোগিতায় লড়বে।
বিজ্ঞান উৎসবের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক ছিল মজার মজার প্রশ্ন করা। এবারের প্রশ্ন ছিল, ডিএনএ কী, সায়েন্স শব্দটি কীভাবে এল, কীভাবে ক্যানসার রোগের বিস্তার ঘটে ইত্যাদি। শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফোর উইমেনের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাঈনুল হক মিয়াজী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ মারুফুল কাদের, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুমন বড়ুয়া, ইউএসটিসি ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জয়শ্রী দাশ।
পুরস্কার পেল যারা
উৎসবের শেষ ভাগে কুইজ প্রতিযোগিতা এবং প্রজেক্টের সেরা বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। প্রজেক্টে তৃতীয় পুরস্কার জিতেছে অষ্টম শ্রেণির রায়ান ইবনে হাসান ও আকিব সিরাজী এবং সপ্তম শ্রেণির আরিয়ান আবরার চৌধুরীর দল। তারা ‘আমার ফসল’ নামের প্রকল্প নিয়ে এসেছিল।
কুইজে নিম্নমাধ্যমিক বিভাগে প্রথম হয়েছে ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দেবজিত দে, দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের আফিয়া মাহজাবিন, তৃতীয় চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের এস এম মাহরুশ জাওয়াদ।
মাধ্যমিক পর্বে প্রথম ও তৃতীয় হয়েছে যথাক্রমে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের নির্ণয় নীল পাল এবং রাজর্ষি দাশ গুপ্ত, দ্বিতীয় হালিশহর আহমদ মিয়া সিটি করপোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নামিরা ইসলাম।
উৎসবে শিক্ষার্থীদের জাদু দেখান রাজীব বসাক। গান গেয়ে শোনান শিল্পী ঋতু বড়ুয়া। উপস্থাপনা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা চট্টগ্রামের উপদেষ্টা শিহাব জিশান। প্রশ্নোত্তর পর্ব সঞ্চালনা করেন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদনা দলের সদস্য শিবলী বিন সারওয়ার। চট্টগ্রাম ছাড়াও রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট বিভাগে অনুষ্ঠিত হবে উৎসবের আঞ্চলিক পর্ব। সবশেষে জাতীয় পর্বের মাধ্যমে শেষ হবে এ আয়োজন। শিক্ষার্থীদের স্ন্যাকস সরবরাহ করে ড্যান ফুডস লিমিটেড এবং সহযোগিতায় ছিল চট্টগ্রাম বন্ধুসভা।