জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘দেশ খুব ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সরকার মবতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দেশ এখন মব ভার্সেস রাষ্ট্র , মব ভার্সেস সরকার—এই অবস্থায় পড়েছে।’
আজ রোববার সন্ধ্যায় রংপুর নগরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। এ সময় দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের পাশে বসে ছিলেন। তবে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
আগামীকাল সোমবার জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব আজ রংপুরে আসেন।
মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগ হত্যার প্রসঙ্গ তুলে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগ নামের একজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারা হয়েছে। তাঁর থেকে ১০০ গজ দূরে আনসার ক্যাম্প ছিল। আনসার ক্যাম্পে আনসার ছিল। তাঁদের হাতে অস্ত্র ছিল, কিন্তু কেউ তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে যাননি। অর্থাৎ বর্তমান সরকার পুলিশ প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছে না।’
পুলিশ প্রশাসন দিয়ে দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, ‘সরকার তীব্র ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। এই ব্যর্থতার দায় বর্তমান সরকারকে নিতে হবে। আমরা মনে করি, এই প্রভাব রাজনীতিতেও পড়ছে। সরকারের সঙ্গে প্রশাসনের সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না। সরকারের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয় দেখা যাচ্ছে না। সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই।’
সংস্কারপ্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টিকে না রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করে শামীম হায়দার বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে জাতীয় পার্টি সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিল। শ্রমিক পার্টির দুজন শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু সেই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা থাকার পরও সংস্কারপ্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টিকে রাখা হলো না। জাতীয় পার্টিকে গালি দেওয়া হলো। আমাদের মাননীয় চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারছে না উল্লেখ করে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আজকে আমরা মিটিং, মিছিল করতে গেলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। যদি মিটিং-মিছিল করতে না পারি, তাহলে নিবন্ধিত দল হিসেবে সরকার কীভাবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করবে। বর্তমান সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য সচেষ্ট নয়।’
জাতীয় পার্টির সাবেক জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব এবং তাঁকে নতুন মহাসচিব করার বিষয়ে জানতে চান এক সাংবাদিক। এ বিষয়ে শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আমরা এই বিষয়গুলো অনেকবার বলেছি। তাঁরা নিজেরা একটি অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি কাউন্সিলের পাঁয়তারা করছিলেন। সব জেলার প্রতিনিধিরা আমাদের পার্টি অফিসে গিয়ে মাননীয় চেয়ারম্যানকে সমর্থন জানান এবং তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানান। এরপর ২৮ জুনের সভায় সব প্রেসিডিয়াম সদস্য তাঁদের শাস্তির জন্য মাননীয় চেয়ারম্যানকে বলেন ও রেজল্যুশন পাস করান। ২৮ জুনের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের মিটিংয়ের ভিত্তিতেই রেজল্যুশন করা হয় এবং তাঁদের বহিষ্কার করা হয়।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের কো-চেয়ারম্যান ও রংপুরের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম ইয়াসির, জেলা কমিটির আহ্বায়ক আজমল হোসেন, সদস্যসচিব আবদুর রাজ্জাক প্রমুখ।