বাড়ির উঠানে হাঁটুপরিমাণ পানি। উঠানের সেই পানিতে মাছ ধরার চাঁই পাতা হচ্ছে। গতকাল শনিবার যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে
বাড়ির উঠানে হাঁটুপরিমাণ পানি। উঠানের সেই পানিতে মাছ ধরার চাঁই পাতা হচ্ছে। গতকাল শনিবার যশোরের অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামে

টানা বৃষ্টিতে ভবদহের ৩০টি গ্রাম জলাবদ্ধ, দুর্ভোগে মানুষ

টানা বৃষ্টিতে যশোরের অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার ৩০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের অনেক বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় স্থাপনায় পানি ঢুকে পড়েছে। নদী দিয়ে ঠিকমতো পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

ভবদহ অঞ্চল যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুর এবং খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলার অংশবিশেষ নিয়ে গঠিত। এই এলাকার পানি ওঠানামা করে মুক্তেশ্বরী, টেকা, শ্রী ও হরি নদীর মাধ্যমে। তবে পলি পড়ে নদীগুলো নাব্যতা হারানোয় পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে।

যশোরের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া বিভাগ জানায়, গত জুনে গড় বৃষ্টিপাত ছিল ২৯৯ মিলিমিটার। চলতি জুলাইয়ের ২৭ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৫১৪ মিলিমিটার। এতে ভবদহ এলাকার ৫২টি বিল প্লাবিত হয়েছে। পানি উপচে আশপাশের গ্রামে ঢুকছে।

মনিরামপুর উপজেলার লখাইডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ জয়শ্রী মণ্ডল বলেন, ‘উঠোনে প্রায় হাঁটুজল। আর একটু জল বাড়লে ঘরে উঠে যাবে। ঘরে জল উঠলে রাস্তায় ওঠা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’ সুজাতপুর গ্রামের সাধন চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার বাড়ির উঠোনে জল। প্রতিদিন জল বাড়ছে। আর একটু বৃষ্টি হলে বাড়িঘর ছাড়তে হবে।’

বাজে কুলটিয়ার গৃহবধূ লাভলী বিশ্বাস বলেন, ‘এবার আগেই বাড়িতে জল এসেছে। ওপরের জলের চাপে প্রতিদিন জল বাড়ছে। টিউবওয়েল, বাথরুম জলের তলে চলে গেছে। থাকার ঘরে জল ওঠার মতো অবস্থা হয়েছে। খুব খারাপ অবস্থায় আছি।’

জলাবদ্ধ হয়ে আছে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বাজেকুলটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতকাল শনিবার বিকেলে

অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের দিলীপ বিশ্বাসের (৪০) বাড়ির উঠানে হাঁটুপানি। উঠানের পানিতে তিনি মাছ ধরার চাঁই পাতছিলেন। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির সঙ্গে ওপরের দিকের জল চাপ দেওয়ায় জল বেড়েই চলেছে। উঠোনে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছি। ঘর থেকে সাঁকো দিয়ে বের হচ্ছি। জল আরেকটু বাড়লে ঘরে ঢুকবে।’ একই গ্রামের সুভাষ বিশ্বাস বলেন, ‘খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। যেভাবে জল বাড়ছে, তাতে এবারও জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নেবে।’

জলাবদ্ধ হয়ে আছে বাড়ি। ঘর থেকে বের হওয়ার মাধ্যম বাঁশের সাঁকো। গতকাল শনিবার যশোরের মনিরামপুর উপজেলার বাজেকুলটিয়া গ্রামে

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিত বাওয়ালী বলেন, বৃষ্টির পানি জমে ভবদহ এলাকা ডুবতে শুরু করেছে। এলাকার ৩০টিরও বেশি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অনেকের বাড়িতে পানি। অনেক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। তিনি আরও বলেন, ভবদহের ২১-ভেন্ট স্লুইসগেটের মধ্যে মাত্র ছয়টি গেট খোলা হয়েছে। গেট দিয়ে বেশি পানি নামছে। সব গেট খুলে দিলে আরও বেশি পানি নামত। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড সব গেট খুলছে না। এলাকার বিলে টিআরএম (জোয়ারাধার) চালু না করলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), যশোর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ভবদহ ২১-ভেন্ট স্লুইসগেট থেকে খুলনার কুলবাড়িয়া পর্যন্ত হরি নদী, মনিরামপুর থেকে কেশবপুর পর্যন্ত হরিহর নদ, কেশবপুরের বরেঙ্গা থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত আপার ভদ্রা নদীসহ ছয়টি নদী প্রায় ৮১ কিলোমিটার খননের কাজ শুরু হবে আগস্ট মাসে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আমডাঙ্গা খাল সংস্কারে ৪৯ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। দুই-এক মাসের মধ্যে এ কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে পাউবো।

জলাবদ্ধ হয়ে আছে বাড়ি। গতকাল শনিবার যশোরের মনিরামপুর উপজেলার সুজাতপুর গ্রামে

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী প্রথম আলোকে বলেন, নদীতে জোয়ারের সময় ভবদহ স্লুইসগেটের ২১-ভেন্টের ওপর চারটি বড় ও ১৫টি ছোট বৈদ্যুতিক সেচযন্ত্র দিয়ে পানি সেচে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভাটির সময় ছয়টি গেট খুলে দেওয়া হচ্ছে। গেটগুলো দিয়ে প্রচুর পানি বের হচ্ছে। এতে এলাকার পানি দ্রুত সরে যাবে। তিনি বলেন, ভবদহ এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য সেনাবাহিনী আগামী মাসে ছয়টি নদীর ৮১ দশমিক ৫ কিলোমিটার খননের কাজ শুরু করবে। আমডাঙ্গা খাল সংস্কারের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে।