
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার এক প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার ফেসবুকে পোস্ট করে ওই ছাত্রী এ অভিযোগ করেন।
পোস্টটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে গতকাল শুক্রবার বিকেলে কচুয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযুক্ত শিক্ষক অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে চাকরির জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবির পাল্টা অভিযোগ করেন।
ফেসবুক পোস্টে ওই ছাত্রী অভিযোগ করেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিদ্যালয় থেকে তিনি ২০২৪ সালে এসএসসি পাস করার পর ঢাকার কাছাকাছি একটা জেলায় থাকেন। তিনি প্রধান শিক্ষককে জানিয়েছিলেন, ঢাকায় এলে যেন তিনি তাঁর সনদ ও প্রত্যয়নপত্র নিয়ে আসেন। ওই শিক্ষক ঢাকায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলনে যোগ দিতে এসে ছাত্রীকে সনদ ও প্রত্যয়নপত্র নিতে ১৪ অক্টোবর আসতে বলেন। নির্ধারিত দিনে ওই ছাত্রী এলে শিক্ষক তাঁকে নাশতা করান এবং গুলিস্তানের নবাবপুর রোডের একটি আবাসিক হোটেলে নিয়ে যান। ওই হোটেলে তাঁকে ধর্ষণচেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ। এ সময় তাঁর ডাক-চিৎকারে হোটেলের লোকজন ওই শিক্ষককে রিসেপশনে নিয়ে মারধর করেন বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন ওই ছাত্রী।
যোগাযোগ করলে ওই ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষককে আমি খুব শ্রদ্ধা করতাম। তিনি এমন কাজ করবেন, ভাবতেই পারিনি।’
অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে ওই প্রধান শিক্ষককে কল করলে ‘আমার একটা ফোন আসছে, পরে কথা বলব’ বলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আরও কয়েকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি।
তবে অভিযোগের বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বিকেলে কচুয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ওই শিক্ষক। সেখানে তিনি দাবি করেন, ওই শিক্ষার্থী তাঁর কাছে আসেন এবং সনদপত্র-প্রত্যয়নপত্র নিয়ে চলে যান। ওই শিক্ষার্থী তাঁর কাছে চাকরির জন্য ৫০ হাজার টাকা চান। তিনি ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি হোটেল কক্ষের চাবি নিয়ে দৌড় দেন। পরে ৯ থেকে ১০ দিন পর ফেসবুকে পোস্ট দেন।
ঢাকায় ওই শিক্ষকের সঙ্গে একই কক্ষে ছিলেন কচুয়ার আরেকটি বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি হোটেলে ছিলাম না। হোটেলের লোকজন আমাকে ফোন করে ডেকে আনেন। ওই শিক্ষার্থী ফেসবুকে যেভাবে উল্লেখ করেছে, তাঁরা (হোটেলের লোকজন) ওই সব কথা বলেছে। পরে শুনেছি শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হোটেলের লোকজন নাকি প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিত করেছে।’
ওই হোটেলের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রীকে নিজের মেয়ে পরিচয় দিয়েছিলেন। পরে ছাত্রী অভিযোগ করেন। তাঁরা বিষয়টি থানা-পুলিশকে জানানোর কথা বললে ছাত্রী নিজে ও ছাত্রীর মা মুঠোফোনে তাঁদের বিষয়টি পুলিশকে না জানাতে অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে ছাত্রীর মায়ের কথামতো তাঁকে নিরাপদে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। আর অভিযুক্ত শিক্ষককে তাঁর অন্য সহকর্মীদের জিম্মায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহা. সাদেকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’