পুকুরে পাওয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সীমানা পিলারটি নিয়ে কী করবে পুলিশ

৩০ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের সীমানা পিলারটির দৈর্ঘ্য ৬৩ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ২২ সেন্টিমিটার
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলায় পুকুরে মাছ ধরতে গিয়ে উদ্ধার করা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়কার সীমানা পিলারটি এখন পুলিশি হেফাজতে আছে। পিলারটি জাদুঘরে পাঠানোর চিন্তাভাবনা করছে বিরামপুর থানা-পুলিশ।

বিরামপুর থানার উপপরিদর্শক তুহিন নন্দী বলেন, গতকাল মঙ্গলবার সীমানা পিলারটি উদ্ধারের পর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এটিতে কোনো মূল্যবান ধাতব পদার্থ আছে কি না বা এটি কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কি না, তা জানার জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক দপ্তরে পাঠানো হবে। নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের প্রত্নতাত্ত্বিক কার্যালয়ের একটি প্রতিনিধিদল আজ বুধবার থানায় সীমানা পিলারটি দেখার জন্য আসার কথা আছে। পিলারটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার অনুমতির জন্য আজ অথবা আগামীকাল বৃহস্পতিবার দিনাজপুর আদালতে থানার সাধারণ ডায়েরিসহ একটি আবেদন করা হবে। আদালত অনুমতি দিলে পিলারটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার অথবা রংপুরের তাজহাট জমিদারবাড়ির জাদুঘরে দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিরামপুর পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের জোলাগাড়ী মহল্লার একটি পুকুরে মাছ ধরার সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়কার একটি সীমানা পিলার পাওয়া গেছে। পরে স্থানীয় লোকজন পিলারটি তোলেন। পিলারটির গায়ে থাকা তথ্য অনুযায়ী, এটি ২০৫ বছরের পুরোনো। পরে এটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় বিরামপুর থানার পুলিশ।

উদ্ধার করা সীমানা পিলারটির গায়ে ইংরেজি বড় অক্ষরে লেখা EAST INDIA COMPANY 1818। লেখার ওপরের অংশে বিপজ্জনক চিহ্ন এবং নিচের অংশে ক্রস চিহ্নের দুটি পতাকার প্রতীক আছে। পিলারের আরেক পাশে ইংরেজি অক্ষরে UK3M লেখা আছে। ৩০ কেজি ১০০ গ্রাম ওজনের পিলারটির দৈর্ঘ্য ৬৩ সেন্টিমিটার ও প্রস্থ ২২ সেন্টিমিটার। সীমানা পিলারটি বালু, সিমেন্ট ও খোয়ার তৈরি বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ জানায়, পুকুর থেকে উদ্ধারের সময় পিলারটি প্লাস্টিকের বস্তায় মোড়ানো ছিল। পিলারের ভেতরের অংশ খালি ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, পিলারের ভেতরের অংশ থেকে কে বা কারা মূল্যবান ধাতব বের করে নিয়েছে। পরে এটি রাতের অন্ধকারে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মামুনুর রশিদ বলেন, পিলারটির গায়ে লেখা থেকে বোঝা যাচ্ছে, এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সময়কার। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এখন নেই। কিন্তু তাদের বাংলাদেশের ইতিহাস অনেক আলোচিত ও সমালোচিত। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে শুধু পুস্তকের মাধ্যমেই চেনে। উদ্ধার করা সীমানা পিলারটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সরকার যদি কোনো বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা জাদুঘরে রাখার উদ্যোগ নেয়, তাহলে এটি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গবেষণার উৎস হিসেবে কাজে লাগতে পারে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বগুড়া আঞ্চলিক পরিচালকের কার্যালয়ের সহকারী প্রত্নতাত্ত্বিক প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কিছু সীমানা পিলারে মূল্যবান ধাতব পদার্থ বা বজ্রনিরোধক ম্যাগনেটিক পদার্থ থাকে। তবে এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। আর এতে এমন কিছু থাকলে প্রত্নতাত্ত্বিক দপ্তরের মাধ্যমে সংরক্ষণের জন্য স্থানীয় জাদুঘরে পাঠানো যেতে পারে।