শরীয়তপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা একাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিজেই মই দিয়ে গাছে উঠে পোস্টার ঝোলাচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সদরের সুবচনি এলাকায়
শরীয়তপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা একাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। নিজেই মই দিয়ে গাছে উঠে পোস্টার ঝোলাচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সদরের সুবচনি এলাকায়

শরীয়তপুর-১ আসন

তিনি প্রার্থী, তিনিই একমাত্র কর্মী

গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে একাই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থী। নিজেই পোস্টার লাগাচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন। প্রচারণার সময় তাঁর সঙ্গে কোনো সমর্থক বা কর্মীকে দেখা যাচ্ছে না। ভোট প্রার্থনা করে তিনি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, নির্বাচিত হতে পারলে মেহনতি মানুষ, কৃষক, শ্রমিক ও জনগণের অনগ্রসর অংশকে শোষণ থেকে মুক্তি দেবেন। শরীয়তপুর-১ (সদর ও জাজিরা) আসনের স্বতন্ত্র এই প্রার্থীর নাম মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা হাওলাদার (৪৮)। তাঁর প্রতীক ঈগল।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সদর ও জাজিরা উপজেলা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর-১ আসনে আছে ২৩টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা। এখানে ভোটার আছেন ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৯ জন। আসনটিতে এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ প্রার্থী। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা ছাড়া বাকিরা হলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাসুদুর রহমান, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আবুল বাশার মাদবর ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী আবদুস সামাদ ব্যবসায়ী।

গোলাম মোস্তফা জাজিরা উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের বালিয়াকান্দি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহতাব উদ্দিন হাওলাদারের ছেলে। স্নাতকোত্তর পাস করা এই প্রার্থী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গোলাম মোস্তফা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তাতে ত্রুটি পেয়ে যাচাই-বাছাইয়ে তা বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরপর নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।

প্রতীক বরাদ্দের পরদিন ১৯ ডিসেম্বর থেকে ঈগল প্রতীকের ভোট চাইতে একাই প্রচারণায় নামেন গোলাম মোস্তফা। সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ান। ব্যাটারিচালিত একটি ইজিবাইকে করে পোস্টার, লিফলেট ও মই নিয়ে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছুটছেন। প্রচারণা চালানোর সময় বিভিন্ন স্থানে গাছের সঙ্গে মই ঠেকিয়ে নিজেই রশি দিয়ে পোস্টার ঝুলিয়ে দিচ্ছেন।

গতকাল বিকেলে সদর উপজেলার সুবচনি এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফাকে রশির সঙ্গে পোস্টার ঝোলাতে দেখা যায়। মই দিয়ে গাছে উঠে পোস্টারে রশি বাঁধছিলেন তিনি। এ কাজ শেষ করে স্থানীয় বাজারে ভোটারদের কাছে লিফলেট বিতরণ করতে যান। ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন, ভোট চান। এসব কাজ শেষে ইজিবাইকে করে অন্য এলাকার দিকে ছুটে যান। ইজিবাইকের ওপর থাকা মাইকে তখন গানের সুরে ঈগল প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছিল।

স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা নিজেই নিজের পোস্টার লাগাচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন। প্রচারণার সময় তাঁর সঙ্গে কোনো সমর্থক বা কর্মীকে দেখা যাচ্ছে না

সুবচনি এলাকার বাসিন্দা হেদায়েতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য প্রার্থীরা দলবল নিয়ে গাড়িবহরে করে ভোট চাইতে আসেন। অনেক মানুষের ভিড়ে কখনো কখনো আমরা বিরক্ত হই। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যতিক্রমভাবে একাই প্রচারণা চালাচ্ছেন। এটা আমাদের ভালো লেগেছে। একা থাকলে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়, ভাব বিনিময় করারও সুযোগ হয়।’

পেশায় আইনজীবী জেলা শহরের এক ভোটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচার–প্রচারণা আইন দ্বারা পরিচালিত হয়, যা আমরা আচরণবিধি হিসেবে জানি। প্রচারণার ক্ষেত্রে কোনো প্রার্থীই আচরণবিধি মানছেন না। অনেকে ভোটারদের বিরক্ত করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা অন্তত আচরণবিধি মেনে একাই প্রচারণার কাজ করছেন। এতে যেমন অর্থের অপচয় বন্ধ হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষকে অযাচিত বিরক্তির হাত থেকে রেহাই দিচ্ছেন তিনি।’

নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটারের এক শতাংশের স্বাক্ষরসহ মনোনয়নপত্র জমা দিতে হয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। যেহেতু সেটি পেরেছেন, তাই ভোটাররা তাঁর সঙ্গে আছেন বলে মনে করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম মোস্তফা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভোটাররা সুযোগ পেলে ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবেন। প্রচার–প্রচারণায় কর্মী-সমর্থকদের আনলে বাড়তি টাকার প্রয়োজন হয়। আমি টাকা খরচ করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করতে চাই না। আর একা একা প্রচারণা চালানোর অনেক সুবিধা আছে। সরাসরি ভোটারদের সঙ্গে কথা বলা যাচ্ছে। তাঁদের মনের কথা শুনতে পারছি। আমার এ পদ্ধতির প্রচারণায় সাধারণ মানুষও খুশি।’