চরম্বা উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটক। আজ দুপুরে তোলা
চরম্বা উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটক। আজ দুপুরে তোলা

লোহাগাড়ায় জরাজীর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান, দুর্ঘটনার ঝুঁকি

দেয়ালে রঙের প্রলেপ উঠে গেছে অনেক আগে। প্রায়ই খসে পড়ে পলেস্তারা। দেয়াল, ছাদ ও পিলারের স্থানে স্থানে ফাটল। কোথাও কোথাও বেরিয়ে এসেছে রড। ছাদ বেয়ে পড়ছে পানি। এমনই বেহাল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের চরম্বা উচ্চবিদ্যালয়ের দোতলা ভবনের। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও ছয় শতাধিক শিক্ষার্থীর পাঠদান চলছে জরাজীর্ণ এই ভবনে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০০। ১৯৬৮ সালে ২ একর ২৩ শতক জায়গা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৫ সালে ৭ শতক জায়গায় মূল দোতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়। তিন কক্ষবিশিষ্ট একতলা একটি ভবন নির্মিত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভবনটি ১০ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে ছয় কক্ষবিশিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ দোতলা ভবনটিতেই চলে পাঠদান।

‘বিদ্যালয়ের ভবন এমন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সন্তানকে পড়তে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকেরা। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়ের ভবনগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না’।
সৈয়দ হোসেন, প্যানেল চেয়ারম্যান, চরম্বা ইউনিয়ন পরিষদ

চরম্বা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ের একমাত্র ভবনটি কয়েক বছর ধরে জরাজীর্ণ। বিকল্প উপায় না থাকায় বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের এসব ভবনে পাঠদান করা হচ্ছে।

ভবনের দোতলার এই কক্ষটি ব্যবহৃত হতো কম্পিউটার ল্যাব হিসেবে। তবে ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এক বছর আগে ল্যাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত বুধবার দুপুরে তোলা

গত বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়টির দুটি ভবন। একতলা ভবনটি পরিত্যক্ত। দোতলা ভবনে কক্ষসংকটের কারণে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকেরা একটি কক্ষ ব্যবহার করছেন। প্রতিটি কক্ষে ৪০ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদানের নির্দেশনা থাকলেও প্রায়ই ১০০ জনের অধিক শিক্ষার্থীকে এক কক্ষে পড়ানো হচ্ছে। ব্যস্ততম সড়কঘেঁষা বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে সীমানাপ্রাচীর না থাকায় মাঠের একাধিক অংশের মাটি সরে গিয়ে খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

শিক্ষকেরা জানান, স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে প্রয়োজন ২৩টি কক্ষ। তবে এখন ছয়টি কক্ষেই কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। উপকরণ থাকলেও কক্ষ না থাকায় চালু নেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞান ল্যাব, কমনরুম, প্রার্থনাঘর ও কম্পিউটার ল্যাব।

বিদ্যালয়ে তিন কক্ষের এই একতলা ভবন প্রায় ১০ বছর ধরে তা পরিত্যক্ত। গত বুধবার তোলা

চরম্বা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবন এমন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সন্তানকে পড়তে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকেরা। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়ের ভবনগুলো সংস্কার করা হচ্ছে না।’

জরাজীর্ণ ভবনসহ অন্যান্য সংকট সমাধানের জন্য উপজেলা প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি আবেদন দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিদ্যালয়টির আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি শফিকুল আলম। তিনি বলেন, গত মাসে নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়া পর বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করেছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য কমিটি কাজ করছে।

জানতে চাইলে লোহাগাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ ইনামুল হাছান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য লিখিত আবেদন পেয়েছি। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হবে।’