
‘এটি খুবই আনন্দায়ক খবর যে এই স্কুলে আদিবাসী ও বাঙালি শিক্ষার্থীরা একসঙ্গেই বসে শান্তিপূর্ণভাবে পাঠ গ্রহণ করে। যেখানে ইসলাম-হিন্দু-খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষার্থীরাও একই আসনে বসে পাঠ নিচ্ছে। সম্প্রীতি-ভালোবাসার এ দৃশ্য আমাদের বিমোহিত করেছে।’
আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শনে এসে জার্মান নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক মাথিয়াস রিচার্ড এ মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত রসায়নবিদ সিলভিয়া মাউরিজিও। ‘দেশ ঘুরি’ নামের একটি ট্যুরিস্ট সংস্থার মাধ্যমে তাঁরা এ বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন।
বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হলে ফুলের তোড়া ও মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁদের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ঘুরিয়ে দেখান প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর। তাঁরা শ্রেণিকক্ষগুলোতে গিয়ে পাঠ উপস্থাপন দেখেন। কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের সঙ্গে ভাববিনিময় করে।
এ সময় দুই পর্যটক জানতে পারেন, এ বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বাঙালি শিশুরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে। ইসলাম-হিন্দু-খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ না করে একবেঞ্চে বসে পাঠ গ্রহণ করে। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা খুবই খুশি হন।
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুমা খাতুন দুজনকে একটি গান গেয়ে শোনায়। বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দলের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সামনে ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান প্রদর্শন করে। সিলভিয়াও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাচে অংশ নেন। সৃষ্টি হয় একটি আনন্দদায়ক পরিবেশের। এ সময় বাঙালি ও কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি-ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখে খুশি হন।
মাথিয়াস রিচার্ড ও সিলভিয়া মাউরিজিও অষ্টম শ্রেণির কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থী শ্যামল মার্ডিকে তাঁর জীবনের লক্ষ্য কী জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, এসএসসি পাস করে সে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চায়। অন্যদিকে একই শ্রেণির নিতন্তি টুডু জানায় সে নার্স হতে চায়। এ সময় তাকে উৎসাহ দিয়ে নিজের চিকিৎসক পেশার কথা বলেন মাথিয়াস। শিক্ষার্থীদের সেবামূলক কাজে যুক্ত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
স্কুল পরিদর্শন শেষে মাথিয়াস ও সিলভিয়া কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গ্রাম পরিদর্শন করেন।
‘দেশ ঘুরি’ সংস্থার গাইড (প্রদর্শক) আফতাব-উজ-জামান নয়ন বলেন, ‘আমাদের সংস্থার মাধ্যমে এই দুই পর্যটক আগামী ১৫ থেকে ২০ দিন বাংলাদেশ ভ্রমণ করবেন। আজ দ্বিতীয় দিনেই তাঁরা এ বিদ্যালয়ে আসার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন। এ বিদ্যালয়ের পরিবেশ, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বমূলক পরিবেশ দেখে তাঁরা খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। সচরাচর এমন সম্প্রীতি অন্য বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যায় না। এখান থেকে আমাদের শিখতে হবে। আমাদের খুবই ভালো লেগেছে।’