
পড়ন্ত বিকেলে সড়কের পাশের বালুর স্তূপের ওপর কাপড় দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় কাঁদছিল এক নবজাতক। কুড়িয়ে পাওয়া শিশুটিকে নিজ বাড়ি নিয়ে যান এক নারী। এর পর থেকে তিনি নিজের সন্তানের মতো নবজাতকটিকে লালন–পালন করছেন। সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়নের বাকাতলা গ্রামে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বংশীকুণ্ডা উত্তর ইউনিয়নের বাকাতলা ও বাঙালভিটা গ্রামটি পাশাপাশি। বাকাতলা গ্রামের পেছনে থাকা পাকা সড়কের এক পাশে বালুর স্তূপের ওপর শরীরে কাপড় প্যাঁচানো অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে নবজাতক এক শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পান স্থানীয় লোকজন। ধীরে ধীরে এলাকার অনেক নারী–পুরুষ সেখানে জড়ো হন। পরে এক বৃদ্ধা ওই শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে কিছুক্ষণ পরই সেখানে রেখে দেন।
নবজাতক শিশুটির কান্না সহ্য করতে না পেরে বাঙালভিটা গ্রামের বাসিন্দা পল্লিচিকিৎসক মোস্তফা কামালের স্ত্রী হাসিনা বেগম (৩৭) কোলে তুলে দুগ্ধ পান করালে নবজাতক শিশুটির কান্না থেমে যায়। পরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে শিশুটিকে নিজ বাড়ি নিয়ে যান তিনি। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানান এলাকাবাসী। পরদিন শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে পাশের তাহিরপুর উপজেলার ২৫ বছর বয়সী এক নারী ওই বাড়ি গিয়ে ওই নবজাতককে নিজের বলে দাবি করেন। তখন ইউএনওর অনুমতি ছাড়া শিশুটিকে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়ে দেন হাসিনা বেগম ও তাঁর স্বামী। পরে ওই নারী সেখান থেকে চলে যান।
পল্লিচিকিৎসক মোস্তফা কামালের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের চারটি সন্তান রয়েছে। কুড়িয়ে পাওয়া কন্যাশিশুটিকে এক নারী নিতে এসেছিলেন, আমরা তাঁর কাছে শিশুটিকে দিইনি। ইউএনও স্যার ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা স্যার আমাদের বলেছেন, এ ঘটনায় থানায় জিডি করে জিডির কপিসহ সিলেটের ছোটমণি নিবাসে নিয়ে গিয়ে হস্তান্তর করার জন্য। আগামীকাল বুধবার এ ঘটনায় থানায় জিডি করব এবং ছোটমণি নিবাসে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেব। আমরা নিজের সন্তানের মতোই শিশুটিকে লালন–পালন করছি। সে সুস্থ আছে।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ধর্মপাশা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিক আহমেদ জানিয়েছেন, ওই নবজাতকটিকে যাঁরা এখন লালন–পালন করছেন, তাঁদের থানায় জিডি করে সিলেটের বাগবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ছোটমণি নিবাসে হস্তান্তরের জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। যাতায়াতের খরচ সমাজসেবা কার্যালয় থেকে মেটানো হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায় আজ মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ও মধ্যনগর থানার ওসির উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। নবজাতকটির মা–বাবার পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাই শিশুটিকে সিলেটের ছোটমণি নিবাসে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’