জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় সমবায় সমিতির আমানতের টাকা ফিরে পেতে গ্রাহকদের অবস্থান কর্মসূচি। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় সমবায় সমিতির আমানতের টাকা ফিরে পেতে গ্রাহকদের অবস্থান কর্মসূচি। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে

জামালপুরে আমানতের টাকা ফিরে পেতে গ্রাহকদের অবস্থান কর্মসূচি

জামালপুরের মাদারগঞ্জে সমবায় সমিতি থেকে আমানতের টাকা ফেরত পেতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন গ্রাহকেরা। আজ সোমবার সকাল থেকে উপজেলা শহরের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।

‘মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে আমানতকৃত অর্থ উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটি’–এর ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানান, লাভের আশায় ২৩টি ‘সমবায় সমিতিতে’ টাকা জমা করেছিলেন প্রায় ৩৫ হাজার গ্রাহক। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা ২০২২ সালের শেষের দিকে আত্মগোপনে চলে যান। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়েছিলেন তাঁরা। জামালপুর থেকে এক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা তাঁরা আত্মসাৎ করেছেন।

আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে আজ সকাল ১০টায় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হন গ্রাহকেরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁদের সমাবেশ শুরু হয়। আমানতের অর্থ ফেরতের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়ে তাঁরা সেখানে বসে পড়েন। এর আগে একই দাবিতে ৪ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় ঘেরাও করেন তাঁরা।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, তাঁদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। সমবায় সমিতির মালিকেরা আত্মগোপনে যাওয়ার পর তাঁরা মাদারগঞ্জ থানা ও জামালপুরের আদালতে একাধিক মামলা করেছেন। জেলা প্রশাসক, জেলা সমবায় কার্যালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু আমানতের টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ন্যূনতম কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে তাঁরা এ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেন। টাকা ফেরতের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দেন তাঁরা।

জেলা সমবায় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গ্রাহকের ৭৩০ কোটি টাকা সমিতিগুলোর কাছে ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা, শতদল, স্বদেশ, নবদীপ, হলিটার্গেট ও রংধুন অন্যতম। ছয়টি সমিতির কাছে জমা আছে ৭০০ কোটি টাকার বেশি। শুধু মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাব করে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় আছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরের কয়েক হাজার গ্রাহক আছেন।

আমানতের অর্থ উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী বলেন, সমবায়সহ স্থানীয় প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের ন্যূনতম সহযোগিতা করছে না। সবার মধ্যে এমন একটা ভাব, সমিতিগুলোয় টাকা রেখে গ্রাহকেরাই বড় অপরাধ করেছেন। টাকা ফেরত পেতে আরও কঠোর ও লাগাতার আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সমবায় কর্মকর্তা আবদুল হান্নান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রাহকেরা যাতে তাঁদের আসল টাকাগুলো অন্তত ফেরত পান, এ জন্য আমরা গ্রাহকদের নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। বিভিন্নভাবে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ। স্থানীয় প্রশাসন যদি উদ্যোগ নেয়, তাহলে কিছু একটা হতে পারে।’

২৩টি সমিতির মধ্যে আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি হুমায়ুন আহম্মেদ, শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মোস্তাফিজ, স্বদেশ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আনিছুর রহমান ও নবদীপ সমবায় সমিতির সভাপতি ইব্রাহিম খলিল দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে আছেন। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে বন্ধ পাওয়া যায়।