টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বানিয়াবাগী গ্রামের শ্যামল সাহা ও অনিতা সাহার ছেলে–মেয়ে জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বানিয়াবাগী গ্রামের শ্যামল সাহা ও অনিতা সাহার ছেলে–মেয়ে জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেয়েটির খরচ জোগানো নিয়ে দুশ্চিন্তা

জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েটি পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছেলে এইচএসসি পাস করে বেকার। তাঁদের বাবা শ্যামল সাহা অসুস্থ, কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় তাঁদের মা অনিতা সাহাকে। যা পান, তা দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ জোগানো নিয়ে আছেন দুশ্চিন্তায়।

এই পরিবারের বাস টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বানিয়াবাড়ী গ্রামে। অনিতা সাহা বলেন, তাঁদের প্রথম মেয়ে পুতুল সাহা সুস্থ-স্বাভাবিক। তাঁর বিয়ে হয়েছে সিরাজগঞ্জে। পুতুলের পর এক ছেলে ভোলানাথ সাহা ও মেয়ে সীমা সাহার জন্ম। তাঁরা দুজনই জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন।

সীমা সাহা লেখাপড়া করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগে প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়েছেন। থাকেন শামসুন্নাহার হলে। সীমা বলেন, চোখে না দেখলেও তাঁর লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ ছোটবেলা থেকে। রাজশাহী পিএসসি সেন্টার অন্ধ ও বধির স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। পরে ঢাকার আদাবর মিশন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৪ দশমিক ১৭ পেয়েছিলেন। ঢাকার মোহাম্মদপুর বছিলা ফিরোজা বাসার আইডিয়াল কলেজ থেকে ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পান। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

সীমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ৫ শতাংশ জায়গায় ভাঙাচোরা একটি টিনের ঘর। টিনের চাল ফুটো হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই পাশের রৌহা গ্রামে মামার বাসার একটি কক্ষে আপাতত তাঁরা থাকছেন।

অনিতা সাহা বলেন, ‘নিজেরাই চলবার পারি না। মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ কেমনে জোগামু?’ স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সহযোগিতা নেন জানিয়ে তিনি মেয়ের জন্য একটা বৃত্তির ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন।

এলেঙ্গা লুৎফর রহমান মতিন মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক কাশীনাথ মজুমদার বলেন, দৃষ্টিহীনতাকে জয় করে দুই ভাই-বোন লেখাপড়া করেছেন। বোনটির লেখাপড়ার জন্য আর ভাইটির কর্মসংস্থানের জন্য কেউ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলে পরিবারটির খুব উপকার হতো। শারীরিক সীমাবদ্ধতাকে জয় করে তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতেন।

টাঙ্গাইলের সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা বলেন, দরিদ্র পরিবারটির দুটি সন্তানের চোখে আলো নেই। অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে তাঁরা পড়াশোনা করেছেন। তাঁদের আরেকটু এগিয়ে যাওয়ার জন্য মানুষের সহায়তা প্রয়োজন।