
ময়মনসিংহের নান্দাইলে জলাশয়ের (বিল) ঝোপের আড়াল থেকে উদ্ধার হওয়া সেই বৃদ্ধা কারও ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। নিজের পরিচয়ও বলছেন না তিনি। কেবল মুখ আড়াল করে কেঁদে চলেছেন। এমন অবস্থায় আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে তাঁর পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ।
জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে নান্দাইল মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রুবেল মিয়াসহ দুই পুলিশ সদস্য গতকাল শনিবার দুপুরে উপজেলার মুশুলি ইউনিয়নের উত্তর মুশুলির ভারুয়া বিলে যান। তাঁরা বিলের কচুরিপানার পাশে একটি উঁচু জায়গায় সৃষ্ট ঝোপের আড়াল থেকে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
বৃদ্ধা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁর চোখে টিউমার রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে চোখের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই।
নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আজ রোববার সকালে বৃদ্ধার আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করে জেলার অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানো হয়। সংস্থাটি জাতীয় পরিচয়পত্র ভান্ডার থেকে সেই ছাপ মিলিয়ে তাঁর পরিচয় উদ্ধার করেছে। সেখানে তাঁর নাম বেগম খাতুন লেখা রয়েছে। ৮৮ বছর বয়সী বেগম খাতুন জামালপুরের বকশিগঞ্জ উপজেলার জয়গঞ্জ পাগলাপাড়া বাজারের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে।
ওসি মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ওই বৃদ্ধা নান্দাইল উপজেলার মুশুলি ইউনিয়নের ভারুয়া বিলের মাঝখানে ঝোপের আড়ালে কীভাবে এলেন, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। তবে বৃদ্ধা এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাইছেন না।
আজ সকাল ১০টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নারী ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, শয্যার চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছেন ওই বৃদ্ধা। নিজেকে আড়াল করে অঝোরে কাঁদছেন তিনি। এ প্রতিবেদক তাঁকে কয়েকবার ডাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি কথা বলতে ও মুখ থেকে চাঁদর সরাতে রাজি হননি। উল্টো চাঁদর আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরে নিজেকে আড়াল করতে চান।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন কয়েকজন রোগী ও তাঁদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল দুপুর থেকে বৃদ্ধা শুধুই কাঁদছেন। অনেকে তাঁকে ‘খালা, চাচি, দাদি’ সম্বোধন করে কথা বলার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া দেননি। তাঁকে দেখতে আসা লোকজন কিছু দিতে চাইলেও নিচ্ছেন না তিনি। তাঁকে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জ্যেষ্ঠ নার্স হোসনে আরা বানু।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মোহাম্মদ আকাইদ বলেন, বৃদ্ধা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁর চোখে টিউমার রয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে চোখের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই বৃদ্ধার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। অভিভাবক পাওয়া গেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।