Thank you for trying Sticky AMP!!

ছেলে বেল্লালের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছানোর পর মা আলেয়া বেগমের কান্না থামছে না

‘লঞ্চ আমার বংশ নির্বংশ কইরা দিল’

ঢাকার সদরঘাটে লঞ্চের রশি ছিঁড়ে বেল্লাল হোসেন, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের আকস্মিক মৃত্যুর খবরে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার বাড়িতে মাতম চলছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বেল্লালের বাড়িতে মৃত্যুর খবর পৌঁছানোর পর মা আলেয়া বেগমের কান্না থামছে না। মাতম করতে করতে মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। কিছুক্ষণ পরপর চিৎকার করে তিনি বলে উঠছেন, ‘লঞ্চ আমারে নিঃস্ব করে দিয়ে গেল।’

বেল্লাল হোসেনের বাড়ি মঠবাড়িয়া উপজেলা খায়ের ঘটিচোরা গ্রামে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, স্বজন-প্রতিবেশীরা আলেয়া বেগমকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তবে তাঁর কান্না থামছে না।

কাঁদতে কাঁদতে আলেয়া বেগম বলছিলেন, ‘আমার ছেলে, বউ, নাতি—সব হারালাম। আমার আরেক নাতি পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মায়ের সঙ্গে ঘুমিয়ে গেল। যারা চারটা প্রাণ নিয়ে গেল, আমি তাদের বিচার চাই।’ তিনি বলতে থাকেন, ‘১৫ রোজায় বেল্লাল বাড়ি আইছিল। ওরে কইলাম বউ ও নাতিরে লইয়া ঈদে বাড়ি আইস। সবাই মিল্লা ঈদ করমু। আমার লগে ঈদ করতে পোলায় বাড়ি আওয়ার পথে মইরা গেল। লঞ্চ আমার বংশ নির্বংশ কইরা দিল।’

আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বেল্লাল হোসেনের (২৮) লাশ খায়ের ঘটিচোরা গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এই গ্রামেই তাঁর মামার বাড়িতে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী মুক্তা বেগম (২২) ও মেয়ে মাইশার (৪) লাশ শ্বশুরবাড়ি উপজেলার দাউদখালী গ্রামে দাফন করা হয় আজ সকাল ৯টার দিকে।

Also Read: অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে হুড়োহুড়ি এড়াতে ঈদের দিন যাত্রা, সদরঘাটে শেষ বিল্লালের পুরো পরিবার

মুক্তা বেগমের চাচাতো ভাই রিয়াজ খান বলেন, ‘বেল্লালের বাড়িতে দাফনের মতো জমি নেই। তাই আমরা চেয়েছিলাম তিনজনের লাশ আমাদের বাড়িতে পাশাপাশি দাফন করতে। কিন্তু বেল্লালের মায়ের ইচ্ছা ছেলের লাশ তাঁর বাবার বাড়িতে দাফন করার। মায়ের ইচ্ছায় ছেলের লাশ সেখানে হয়েছে।’

এলাকার লোকজন জানালেন, আলেয়া বেগমের একমাত্র ছেলে বেল্লাল। বেল্লাল ও মুক্তা দম্পতির বিয়ে হয় ছয় বছর আগে। বেল্লাল গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সেখানে থাকতেন।

Also Read: সদরঘাটে নিহত পাঁচজনের মধ্যে এক পরিবারের তিনজন

গতকাল দুপুরে বেল্লাল ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে সদরঘাটে যান। পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া এমভি পূবালী-১ লঞ্চে ওঠার জন্য সদরঘাটের ১১ নম্বর পল্টুনে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। তখন ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে যাত্রী ওঠানোর অপেক্ষায় ছিল এমভি তাসরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ নামের দুটি লঞ্চ। হঠাৎ ফারহান-৬ লঞ্চটি তাসরিফ-৪–এর ডান পাশ দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। তিনটি লঞ্চের প্রায় ১০ মিনিট ধরে ধাক্কাধাক্কি হয়। সেই ধাক্কা লেগে হঠাৎ পন্টুনে বাঁধা এমভি তাসরিফের মোটা রশি ছিঁড়ে যায়। মোটা ওই রশি মুহূর্তের মধ্যে এমভি পূবালী-১–এর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বেল্লাল, তাঁর স্ত্রী, সন্তানসহ পাঁচজনকে আঘাত করে। তাঁদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের দাফন বাবদ সহায়তা করা হবে। ইউএনও ছুটিতে আছেন। উনি এলে সহায়তার টাকা পাওয়া যাবে।

Also Read: সদরঘাটে যাত্রী নিহতের ঘটনায় দুই লঞ্চের চালকসহ ৫ জনের নামে মামলা

Also Read: সদরঘাটে ৫ যাত্রী নিহতের ঘটনায় দুই লঞ্চের ৪ চালকসহ আটক ৫