Thank you for trying Sticky AMP!!

সাতক্ষীরার সীমান্ত নদী ইছামতীতে ভাঙন চলছে। ইতিমধ্যে দেবহাটা উপজেলার অনেক জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত রোববার ইছামতী নদীর দেবহাটা এলাকায়

ভাঙনে সরে আসছে সীমান্ত নদী ইছামতী, পাল্টে যাচ্ছে দেবহাটা উপজেলার মানচিত্র

সাতক্ষীরার সীমান্ত নদী ইছামতীর ভাঙনের কারণে বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে। পাল্টে যাচ্ছে দেবহাটা উপজেলার মানচিত্র। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অংশের কয়েক হাজার বিঘা জমি বিলীন হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতীয় অংশে জেগে ওঠা চরে গড়ে উঠেছে হোটেল-পার্কসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

নদীভাঙনে ইছামতীর তীরবর্তী দেবহাটা এলাকার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি, কবরস্থানসহ জমিজমা হারাচ্ছেন। এর মধ্যে ইছামতী নদীর বাংলাদেশ অংশ থেকে বালু উত্তোলন করছে একটি মহল। এতে ভাঙন দ্রুত বাড়ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। এ ঘটনায় উদ্যোগ নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁরা একটি অভিযোগ দিয়েছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইয়ানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মাত্র দুই মাস হলো এসেছেন। দেবহাটার কয়েকটি এলাকায় ভাঙন রয়েছে। ভাঙন রোধে গাছ লাগানোসহ টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তিনি জানাবেন। তিনি বলেন, একটি মহল নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ভাঙন বেশি হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসক বরাবর এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের বিষয়টি তিনি তদন্ত করছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরার দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে বয়ে গেছে ইছামতি নদী। সদর উপজেলার হাড়দ্দহা থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার পানিতর এলাকা থেকে হিঙ্গলগঞ্জ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতকে বিভক্ত করেছে ইছামতী নদী। দীর্ঘদিন ধরে নদীর বাংলাদেশ অংশের ছয়টি স্থানে ভাঙছে। ইতিমধ্যে দেবহাটা উপজেলার দেবহাটা, খানজিয়া, রাজনগর, ভাতশালা ও কোমরপুর গ্রামের কয়েক হাজার বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব গ্রামের বিপরীতে ভারতের অংশে চর জেগে উঠছে।

বাংলাদেশের দেবহাটা উপজেলার বিপরীতে ভারতের টাকী এলাকায় ইছামতী নদীর তীরে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ওই এলাকার ভাঙন রোধে গাছ লাগানো হয়েছে

সরেজমিনে দেখা গেছে, দেবহাটা উপজেলার খানজিয়া, রাজনগর, ভাতশালা ও কোমরপুর গ্রামের নদীতীরবর্তী এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। বিপরীতে নদীর ভারতীয় অংশে ইটভাটা, হোটেল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এ ছাড়া ইছামতী নদীর বাংলাদেশ অংশে দেবহাটা ও টাউন শ্রীপুর এলাকায় বালু তুলতেও দেখা যায়।

দেবহাটার সুশীলগাতি গ্রামের কৃষক গোলাম বারী বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে ইছামতী নদীতে ভাঙন চলছে। দেবহাটার ভাতশালা থেকে কালীগঞ্জের খারহাট পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এলাকার ৮ থেকে ১০ জায়গায় ভাঙন অব্যাহত আছে। বিপরীতে ভারতের অংশে চর জেগে উঠছে। ভাঙন রোধে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ নদীর পাশে শতাধিক ইটভাটা তৈরি করেছে। পাশাপাশি নদীর পাড় ঢালাই করে সুরক্ষা করা হয়েছে। নদী দিনকে দিন বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কালীগঞ্জের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে নদী থেকে বালু তোলায় ভাঙন ত্বরান্বিত হচ্ছে।

সুশীলগাতি এলাকার হারুন প্রথম আলোকে বলেন, খানজিয়া, রাজনগর, ভাতশালা ও কোমরপুর এলাকায় মূলত ভাঙছে। রাজনগর মৌজার অধিকাংশ জমি নদীতে চলে গেছে। ভারতের অংশে রাজনগর নামে গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। ভাতশালা গ্রামের আবদুল হাই (৬৮) বলে, নদীভাঙনে দেবহাটা উপজেলার মানচিত্র সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। ভাঙতে ভাঙতে নদী বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান বলেন, নদীভাঙনে দেবহাটার শিবনগর মৌজার পাশে রাজনগর মৌজা এখন আর নেই। এভাবে চলতে থাকলে ১০ বছরের মধ্যে দেবহাটা উপজেলার বড় অংশ হারিয়ে যাবে।

সাতক্ষীরার সীমান্ত নদী ইছামতীর দেবহাটা এলাকায় নৌকা দিয়ে বালু তুলছে একটি মহল

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-১) সাতক্ষীরা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, কালীগঞ্জের খারহাট থেকে বসন্তপুর ও দেবহাটার টাউন শ্রীপুর থেকে ভাতশালা পর্যন্ত ছয়-সাত কিলোমিটার এলাকায় ইছামতী নদীতে ভাঙন চলছে। আন্তর্জাতিক নিয়মানুযায়ী নদীর মাঝ বরাবর সীমানা নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসেবে নদী বাংলাদেশের দিকে সরে আসছে।

কী পরিমাণ ভূখণ্ড বা জমি বাংলাদেশ হারিয়েছে জানতে চাইলে মো. সালাউদ্দিন বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্তের পর মাপ-জরিপ না করলে বলা যাবে না। তিনি বলেন, স্থায়ী বাঁধ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। সীমান্ত নদী তীর সংরক্ষণ নামে দেশের অন্য জায়গায় একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপ এখানে জরুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে ভাঙন রোধ করা যাবে।