গতকাল শনিবার ভোরে আগুন লাগার পর ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের একটি অংশ নিকটবর্তী আগানগর উঁচু কবরস্থানে আশ্রয় নেয়। আজ রোববার সকালে তোলা
গতকাল শনিবার ভোরে আগুন লাগার পর ঢাকার কেরানীগঞ্জের একটি বহুতল ভবনের বাসিন্দাদের একটি অংশ নিকটবর্তী আগানগর উঁচু কবরস্থানে আশ্রয় নেয়। আজ রোববার সকালে তোলা

কেরানীগঞ্জে আগুন

ঘরপোড়া মানুষেরা রাত কাটালেন কবরস্থানে, বললেন ‘জীবনে এমন দিন আসবে, ভাবিনি’

‘ঘরের কিছু মালামাল নিয়ে কবরস্থানে এসে আশ্রয় নিয়েছি। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই বাধ্য হয়ে কবরের পাশেই গাছের সঙ্গে মশারি টাঙিয়ে রাত কাটাতে হয়েছে। যেখানে শুয়ে ছিলাম, তার পাশেই কবর। জীবনে এমন দিন আসবে, সেটা কখনো ভাবিনি।’

কথাগুলো বলতে গিয়ে কণ্ঠ ভারী হয়ে ওঠে সোহেল রানার। তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টসপল্লির মা ফ্যাশনের পরিচালক ও ‘জাবালে নুর টাওয়ার’ নামের বহুতল ভবনের চতুর্থ তলার বাসিন্দা। গতকাল শনিবার ভোরে ভবনটির ভূগর্ভস্থ গুদামে অগ্নিকাণ্ডের পর পরিবার নিয়ে জীবন বাঁচাতে বেরিয়ে আসেন তিনি।

সোহেল রানা জানান, ভবনের ভূগর্ভস্থ গুদামে তাঁর কয়েক লাখ টাকার কাপড় ও মালামাল আছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মালামাল উদ্ধারের সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই আশায় পরিবার নিয়ে কবরস্থানে অপেক্ষা করছেন।

গতকাল ভোরে আগুন লাগার পর জাবালে নুর টাওয়ারের বাসিন্দাদের বড় একটি অংশ নিকটবর্তী আগানগর উঁচু কবরস্থানে আশ্রয় নেয়। কেউ কেউ আগানগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কেরানীগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, আগানগর ইউনিয়ন পরিষদ ও আগানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাত কাটান। আগুনে পোড়া কাপড় ও ঝুটের গন্ধ আশপাশের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ‘জাবালে নুর টাওয়ার’ নামের বহুতল ভবনের ভূগর্ভস্থ গুদামে লাগা আগুনের ফুলকি নির্বাপণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আজ রোববার সকালে তোলা

আগানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আশ্রয় নেওয়া সেতারা বেগম (৪৭) বলেন, ‘আমরা পাঁচতলার বাসিন্দা। আগুন লাগার পর ঘরে তালা দেওয়ার সুযোগও হয়নি। কী অবস্থায় ঘর আছে তা–ও জানি না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সারা রাত স্কুল মাঠেই কাটিয়েছি। রাতে চোখে এক ফোঁটা ঘুম আসেনি। কপালে কী আছে, কত দিন রাস্তায় থাকতে হবে, সেটিও জানি না।’

আজ রোববার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ভূগর্ভস্থ গুদাম থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে ধোঁয়া নির্বাপণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। পুরো এলাকা সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও উপজেলা প্রশাসনের সদস্যদের তত্ত্বাবধানে আছে। আগানগর উঁচু কবরস্থানে কেউ কেউ মশারি টাঙিয়ে রাত কাটিয়েছেন। তাঁরা যেখানে ছিলেন, তার পাশেই সারি সারি কবর আছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা উৎসুক লোকজন ঘটনাস্থলে ভিড় করছেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, গতকাল ভোর থেকেই টানা অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রম চলছে। ভবনের বেজমেন্টের কিছু স্থানে এখনো আগুনের ফুলকি আছে। সেগুলো সম্পূর্ণ নির্বাপণে কাজ চলছে।

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোশারফ হোসেন বলেন, জাবালে নুর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। বর্তমানে পুলিশ উদ্ধার কার্যক্রম ও ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।