সরকার পরিবর্তনের পর নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ফেনীর দাগনভূঞা বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা দেয় ফেনী জেলা কমিটি। এর পর থেকেই উপজেলা বিএনপির দুটি পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছিল। গত মঙ্গলবার দুই পক্ষ প্রকাশ্যে সংঘর্ষেও জড়ায়।
দলীয় সূত্র জানায়, দাগনভূঞা উপজেলায় বিএনপি দুটি পক্ষে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ভাই ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আকবর হোসেন। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইফুর রহমান।
গত বছরের ২২ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির সদস্যসচিবের স্বাক্ষরে ঘোষিত হয় দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি। এতে উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয় আকবর হোসেনকে। এ ছাড়া মাহমুদুল হককে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কামরুল উদ্দিনকে ওই কমিটির সদস্যসচিব করা হয়।
পাশাপাশি দাগনভূঞা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয় শফিকুর রহমানকে। কাজী সাইফুর রহমানকে ওই কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং হুমায়ূন কবিরকে সদস্যসচিব করা হয়। কাজী সাইফুর রহমান এর আগে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাইফুর রহমানের ভাই জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান। উপজেলা যুবদল, ছাত্রদল ও বিএনপির একটি অংশ এই পক্ষের অনুসারী। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক ও সাইফুর রহমান এই পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছেন। অপর দিকে আকবর হোসেনের সঙ্গে আছেন উপজেলা ও পৌর বিএনপি, ছাত্রদল এবং যুবদলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কামরুল উদ্দিন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুর রহমান, সদস্যসচিব হুমায়ূন কবির, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের আকবর হোসেন পক্ষের সঙ্গে রয়েছেন।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিভাজন তেমন চোখে পড়েনি। তবে ২২ ডিসেম্বর আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর উপজেলা বিএনপির বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। এরপর দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার আকবর হোসেনের শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে হামলা হয়। হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হন। এ জন্য আকবর হোসেনের অনুসারীরা কাজী সাইফুল ইসলাম ও তাঁর ভাই জামশেদুর রহমানের অনুসারীদের দায়ী করেছেন।
দলের কোন্দল নিয়ে জানতে চাইলে কাজী সাইফুর রহমানের ছোট ভাই জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি কাজী জামশেদুর রহমান বলেন, আকবর হোসেনের পক্ষের নেতা-কর্মীরা সুযোগ-সুবিধা, পদ-পদবি পেলেও তাঁরা আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে নেই। ২০০৮ সাল থেকে আকবর হোসেন উপজেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। নতুন তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটিতেও তাঁকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। ওই কমিটিতে জেলা বিএনপির আহ্বায়কের স্বাক্ষর নেই। তাই এই কমিটি যত দিন থাকবে, তত দিন পাল্টা কর্মসূচি দেবেন দলের নেতা-কর্মীরা।
দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক আকবর হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় নীতিমালার আলোকে চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক দল ও জেলা বিএনপি দাগনভূঞা উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠন করে। যাঁরা এ কমিটি মেনে নিচ্ছেন না, তাঁরাই ৫ আগস্টের পর এলাকায় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক বলেন, দাগনভূঞার যে আহ্বায়ক কমিটি হয়েছে, সেটি একক ব্যক্তির (জেলা সদস্যসচিব) স্বাক্ষরে হয়েছে, যা গঠনতন্ত্র বিরোধী। একক ব্যক্তির স্বাক্ষর থাকা মানে একক ব্যক্তির পছন্দ। শুধু সদস্যসচিবের স্বাক্ষরে কোনো কমিটি হয় না। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জানিয়েছেন, এটি দলের কমিটি নয়, যা কেন্দ্রও অবগত রয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশের আলোকে দাগনভূঞায় উপজেলা ও পৌর আহ্বায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছে। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই। এখন তো সবাই পদ চায়, যারা পদ চায়, তারা অতীতে কার কী ভূমিকা ছিল, তা–ও দল অবগত রয়েছে।’