মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশঘেঁষা নিচু জমিতে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফুটেছে শাপলা। বৃহস্পতিবার সকালে
মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশঘেঁষা নিচু জমিতে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ফুটেছে শাপলা। বৃহস্পতিবার সকালে

লাল শাপলার চোখজুড়ানো সৌন্দর্যে পর্যটনের সম্ভাবনা

সকালের সূর্যের আলোয় ঝলমলে দৃশ্য। নিচু জমি ভরে আছে চার-পাঁচ ফুট পানিতে। সেই পানির বুক জুড়ে লাল শাপলার রাজ্য। কোথাও কোথাও ফুটে আছে সাদা শাপলাও। হাওরের বাতাসে ভেসে আসা ঢেউয়ের সঙ্গে নেচে ওঠে শত শত ফুল। মাঝেমধ্যে শাপলার ফাঁকে দল বেঁধে হাঁস ভেসে বেড়ায়।

মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক মহাসড়কের জুড়ী উপজেলার ভূঁয়াই এলাকায় ওই দৃশ্য দেখা যায়। জুড়ী উপজেলা সদর থেকে ভূঁয়াইয়ের শাপলার রাজ্যের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার।

বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে সেখানে পৌঁছাই। সড়কের পশ্চিম দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে বিশাল শাপলার বিস্তৃতি। কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা জায়ফরনগর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রতীশ চন্দ্র দাসের সঙ্গে। তিনি ছোট একটি নৌকার ব্যবস্থা করে দেন। মাঝি ছিলেন এলাকার কৃষক রনজিত দাস। নির্জন পরিবেশে ধীরে ধীরে এগোতে থাকে নৌকা। দুই ধারে লাল শাপলার সমারোহ, মাঝেমধ্যে মেলে সাদা শাপলার ঝলকও।

রতীশ চন্দ্র দাস জানালেন, প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে শাপলার রাজ্য। জমিগুলো এক ফসলি, শুধু বোরো ধান হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে ধান কেটে নেওয়ার পর জমি ফাঁকা হয়ে যায়। তখন বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পাশের হাকালুকি হাওরের পানি ঢুকে পড়ে। ঢলের সঙ্গে ভেসে আসা শিকড় বা কন্দ থেকে জন্ম নেয় শাপলা, ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। কয়েক বছর ধরেই এখানে শাপলার সংখ্যা বেড়েছে। অগ্রহায়ণ মাসের শেষ দিকে পানি শুকিয়ে গেলে জমিতে ধান রোপণ শুরু হয়। তখন আর শাপলা থাকে না।

প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে শাপলার রাজ্য। বৃহস্পতিবার জুড়ী উপজেলার ভূঁয়াই এলাকায়

স্থানীয় কৃষক রণজিত দাস জানালেন, প্রায়ই লোকজন এখানে বেড়াতে আসেন। সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ ছবি বা সেলফি তোলেন, ফেসবুকে লাইভ করেন। তবে নৌকার ব্যবস্থা না থাকায় ভেতরে ঢুকে কাছ থেকে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন না। তাঁর মতে, মৌসুমি নৌকা চালু হলে পর্যটকদের সুবিধা হবে, স্থানীয় লোকজনেরও বাড়তি আয় হবে।

উপজেলা সদরের তরুণ ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম বলেন, যাতায়াতের পথে মোটরসাইকেল থামিয়ে তিনি প্রায়ই কিছু সময় দাঁড়িয়ে শাপলার দৃশ্য দেখেন। তাঁর প্রস্তাব, চারদিকে বাঁধ দিয়ে কিছু জায়গায় পানি আটকে রাখলে সারা বছর শাপলা ফুটত। তখন এটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হতে পারত।

এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবলু সূত্রধর বলেন, স্থানটি এখনো তাঁর নজরে আসেনি। তবে সময় করে ঘুরে দেখবেন। পর্যটনের পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করে উদ্যোগ নেওয়া হবে।