
গোকুল মেধের সরু পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে আচমকা যেন সময় পিছিয়ে যায় কয়েক শতাব্দী। চারদিকে ছড়িয়ে থাকা ইটের দেয়াল, ভাঙা সোপান আর অচেনা সব স্থাপত্য যেন চিৎকার করে বলতে চায়—এখানে একদিন কিছু ঘটেছিল, যা শুধু ইতিহাস নয়, হাজার বছরের লোককথারও অংশ। স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ানো সেই পুরোনো গল্প আজও রং হারায়নি।
গোকুল মেধকে কেউ বলে বেহুলার বাসরঘর, কেউ বলে লখিন্দরের মৃত্যুশয্যা, কেউ আবার ইতিহাস ঘেঁটে নাম দেয় বৈদ্যমঠ। কিন্তু সত্যি কোনটা? মিথ, কিংবদন্তি আর প্রত্নতত্ত্ব মিলেমিশে যে রহস্যের জাল তৈরি করেছে, তার কেন্দ্রে দাঁড়ালেই মনে হয়—আমরা কি সত্যিই জানি এই স্থাপনার অতীত?
গোকুল মেধের ভাঙা দেয়ালের মধ্যে দাঁড়িয়ে এ প্রশ্নগুলোই ঘুরপাক খায়। কারণ, স্থাপনাটি যেমন রূপকথার মতো সাজানো লোকগল্পে পরিপূর্ণ, ঠিক তেমনই এর প্রতিটি ইট বহন করে বৌদ্ধ ঐতিহ্যের গভীর ছাপ। যেন দুই জগতের দ্যোতনা—একদিকে বেহুলার প্রেম, অন্যদিকে সেন-গুপ্তযুগের নির্মাণশৈলী; একদিকে সাপ-নাগের কিংবদন্তি কল্পকাহিনি, অন্যদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক বহু নিদর্শন।
বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে, সদর উপজেলার গোকুল গ্রামে অবস্থিত প্রায় ১৭২ কক্ষবিশিষ্ট মহাকায় স্থাপনাটিকে ঘিরে গল্পের শেষ নেই। ‘গোকুল মেধ’ নামটি উচ্চারণ করলেই মানুষের মনে ভেসে ওঠে বেহুলা-লখিন্দরের করুণ প্রেমকাহিনি। শত শত বছর ধরে লোকমুখে এই গল্প ছড়িয়ে আছে যে লখিন্দরের বাসরঘর ছিল এখানে, সেই ঘরেই কালনাগের কামড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এমনকি পুরোনো গ্রন্থে উল্লেখ আছে, মনসা দেবীর অভিশাপেই নাকি এই অনিষ্ট নেমে এসেছিল। এরপর শুরু হয় বেহুলার অমানুষিক যাত্রা, স্বামীকে বাঁচাতে ছুটে চলা, দেবলোক-ভ্রমণ, নৃত্য, প্রার্থনা। এ সবই লোকগাথায় বারবার ফিরে এসেছে।
মধ্যযুগে প্রায় সমগ্র বাংলায় মঙ্গলকাব্য ধারা অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এ সময় শতাধিক কবি বিভিন্ন নামে মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেন। এই কাব্যের পুরো আখ্যান আবর্তিত হয়েছে মনসার পূজা প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে। মনসামঙ্গল কাব্যে ঘুরেফিরেই বেহুলার বাসরঘরের কথা উল্লেখ রয়েছে। বগুড়ার ইতিকাহিনী গ্রন্থে গবেষক কাজী মোহাম্মদ মিছের আলী উল্লেখ করেন, তৎকালে করতোয়া নদীও সুপ্রশস্ত ও সুগভীর ছিল। তখন করতোয়ার বুকে বৃহৎ নৌকা বাণিজ্যসম্ভার নিয়ে যাতায়াত করত। এ প্রদেশে চাঁদ সওদাগর নামে এক বণিক বাস করতেন। সুন্দরবন থেকে কাঠসহ নানা ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য নৌকা ভিড়ত মহাস্থানগড়ের পশ্চিমে কালীদহ সাগরে।
মনসামঙ্গল কাব্যে উল্লেখ রয়েছে, লখিন্দরের বাবা চাঁদ সওদাগর ছিলেন হিন্দু দেবতা শিবের একনিষ্ঠ পূজারি। তাই তিনি অন্য কোনো দেবতার আরাধনা করতেন না। অন্যদিকে শিবের মেয়ে মনসা ছিলেন সর্পদেবী। তাঁর বাবা শিব তাঁকে বলেন, যদি কোনো শিবের উপাসক প্রথম মনসার পূজা করেন, তাহলেই মর্ত্যে তাঁর পূজার প্রচলন সম্ভব। কিন্তু পূজা দিতে রাজি না হওয়ায় চাঁদ সওদাগরের কনিষ্ঠ পুত্র লখিন্দরকে সর্পে দংশন করে।
কালি ও কলম-এর জুলাই, ২০১৫ সংখ্যায় জাকির তালুকদারের ‘বেহুলার দ্বিতীয় বাসরঘর’ গল্পেও বেহুলা-লখিন্দরের লোককাহিনির ছায়া মেলে। কিন্তু গোকুল মেধের দেয়ালে হাত রাখলেই বোঝা যায়, এখানে আরও বড় কোনো গল্প লুকিয়ে আছে। ২০১০ সালের নভেম্বরে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বাংলা একাডেমি পত্রিকায় ১২৫ থেকে ১৪১ পৃষ্ঠায় লোকগবেষক বেল্লাল হোসেনের ‘কিংবদন্তির বেহুলার বাসরঘর: ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক গবেষণাধর্মী একটি লেখা ছাপা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ‘গোকুল মেধকে ঘিরে বেহুলা-লখিন্দরের লোককাহিনির বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। গোকুল মেধ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই প্রত্ননিদর্শন ঘিরে ১৯২৬ সালের পর থেকে বেহুলা-লখিন্দরের বাসরঘরের লোকগাথা ছড়িয়ে পড়ে।’
বেল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মনসামঙ্গল কাব্যের যেখানেই বিকাশ ঘটেছে, সেখানেই মনসাকেন্দ্রিক নানা স্থান ও নামের প্রচলন ঘটেছে। মনসামঙ্গল কাব্যকে ঘিরে ৩৬০টির অধিক মনসাকেন্দ্রিক স্থান ও নামের প্রচলন রয়েছে। ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গোকুল মেধেও মনসামঙ্গল–এর ছায়া পড়েছে। এটি কার্যত প্রত্ননিদর্শন। তিনি আরও বলেন, মনসা দেবীকে নিয়ে রচিত মনসার ভাসান বা বিষহরি পদ্মাপূরাণ কাব্যের রচয়িতা জীবন কৃষ্ণ মৈত্রের বাড়ি বেহুলার বাসরঘর হিসেবে পরিচিত গোকুলের অদূরে লাহিড়ীপাড়া গ্রামে। তিনি এ অঞ্চলের হাটে-মাঠে, গ্রামে-গঞ্জে পদ্মাপূরাণ–এর আসর জমিয়ে তুলতেন। মনসাকে নিয়ে দেবী বন্দনার এই কাব্য এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে পরবর্তী সময়ে এ অঞ্চলে নেতাই ধোপানীর ধাপ, পদ্মার বাড়ি, কালিদহ সাগর, চাঁদ সওদাগরের বাড়ি, ওঝা ধন্বন্তরীর বাড়ি, উজানীনগর, যোগীর ভবন, মথুরা, চাঁদমুহাসহ ১০-১২টি স্থানের নামকরণ হয়েছে এ কাব্যের বিভিন্ন চরিত্রের নামে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রাচীন প্রত্নতত্ত্ব গোকুল মেধের নামও লোকমুখে হয়ে যায় ‘বেহুলার বাসরঘর’।
বগুড়া শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে, সদর উপজেলার গোকুল গ্রামে অবস্থিত প্রায় ১৭২ কক্ষবিশিষ্ট মহাকায় স্থাপনাটিকে ঘিরে গল্পের শেষ নেই। ‘গোকুল মেধ’ নামটি উচ্চারণ করলেই মানুষের মনে ভেসে ওঠে বেহুলা-লখিন্দরের করুণ প্রেমকাহিনি।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের ভাষ্য, স্থানটি আসলে বৌদ্ধ বৈদ্যমঠ, যা খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে দ্বিতীয় শতক পর্যন্ত নানা সময়ে নির্মিত। বাইরে থেকে দেখতে এটি একটি উঁচু টিলার মতো মনে হলেও গভীরে লুকিয়ে আছে পরিকল্পিত স্থাপত্য। ১৭২টি কক্ষ সমান দূরত্বে সাজানো, মাঝখানে রয়েছে বিশাল একটি প্রার্থনাকক্ষ। কক্ষগুলোর গঠন, দেয়ালের পুরুত্ব, ইটের আকার—সবই প্রমাণ করে এটি কোনো সাধারণ গৃহ বা রাজকীয় কক্ষ ছিল না। বরং এখানে বাস করতেন ভিক্ষু বা বৌদ্ধগুরুরা, যাঁরা চর্চা করতেন ধর্ম, ধ্যান ও চিকিৎসাবিদ্যা। এখানে একটি বৌদ্ধস্তম্ভ রয়েছে, যা সম্রাট অশোক নির্মাণ করেছিলেন। স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ৪৫ ফুট। স্তম্ভের পূর্বার্ধে রয়েছে ২৪ কোণবিশিষ্ট চৌবাচ্চাসদৃশ একটি বাথরুম। ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৬ সালে এন জি মজুমদার কর্তৃক খননের ফলে এখানে একটি বিশাল মন্দির বা স্তূপের ভিত্তি উন্মোচিত হয়। এ মন্দিরের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে গুপ্ত যুগের কতগুলো পোড়ামাটির ফলক পাওয়া যায়। সেন যুগে এখানে বারান্দাযুক্ত একটি বর্গাকৃতির মন্দির উন্মোচিত হয়েছে। এ মন্দিরে বহু গর্তযুক্ত একটি ছোট প্রস্তরখণ্ডের সঙ্গে ষাঁড়ের প্রতিকৃতি উৎকীর্ণ একটি সোনার পাত ছিল। এ থেকে ধারণা করা হয়, এটি একটি শিবমন্দির।
বগুড়ার প্রবীণ কবি ও প্রাবন্ধিক বজলুল করিম বাহার বলেন, বেহুলার বাসরঘর হিসেবে পরিচিত এ মনুমেন্ট ৮০৯ থেকে ৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৈদ্যমঠ। এ স্তূপটিই বাসরঘর নয়। স্তূপটির পশ্চিমার্ধে আছে বাসরঘরের প্রবাদ স্মৃতিচিহ্ন। ষষ্ঠ ও সপ্তদশ শতাব্দীর বৌদ্ধ স্থাপনার সঙ্গে এর মিলও রয়েছে। ননীগোপাল মজুমদারের অধীন হওয়া খননকার্যে বেশ কিছু টেরাকোটা পাওয়া যায়। টেরাকোটাগুলো ছিল গুপ্ত যুগের। গুপ্ত যুগের সময় ৩২০ থেকে ৫৫০ খ্রিষ্টাব্দ।
বিভিন্ন সময়ে এখানে খননে পাওয়া ২৪ কোনা বাথরুম, বিশাল সোপান এবং ৮ ফুট গভীর কূপও ইঙ্গিত করে, এটি ছিল একটি সুসংগঠিত সন্ন্যাসীঘর। বেহুলার বাসরঘরের মতো রোমান্টিক আখ্যানের সঙ্গে এসব স্থাপত্য-তথ্যের মিল খুঁজে পাওয়া কঠিন। গবেষণা বলছে, যে সময়কে বেহুলা-লখিন্দরের যুগ হিসেবে ধরা হয়, সেই সময়ের সঙ্গে গোকুল মেধের স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্যের কোনো মিল নেই। এমনকি নির্মাণশৈলী স্পষ্টভাবে বৌদ্ধ স্থাপনার।
এদিকে ফ্রান্স ও বাংলাদেশের যৌথ গবেষণায় গত শতাব্দীর শেষের দিকে মহাস্থানগড়ে খনন হয়। মো. শফিকুল আলম ও জঁ ফ্রান্সিস স্যালেসের গবেষণাপত্র বলছে, গোকুল মেধের কাছাকাছি কিছু অঞ্চল মূলত পাল আমলে তৈরি। পাল সাম্রাজ্যের সময় ৭৫০ থেকে ১১৬১ খ্রিষ্টাব্দ। সে সময় এ স্থাপনাগুলো তৈরি হয়েছে, ব্যাপারটা এমন নয়। হতেও পারে, এ সময়ে স্থাপনাগুলোর সংস্কার হয়েছিল। লোকগবেষকদের মতে, যে সময়কে বেহুলা-লখিন্দরের যুগ হিসেবে ধরা হয়, সেই সময়ের সঙ্গে গোকুল মেধের স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্যের কোনো মিল নেই। এমনকি নির্মাণশৈলী স্পষ্টভাবে বৌদ্ধ স্থাপনার। তাহলে প্রশ্ন আসে, গল্পটি কোথা থেকে এল?
লোকগবেষক বেল্লাল হোসেনের ধারণা, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে লোকগাথা বহন হতে হতে স্থানীয় মানুষ স্থাপনাটিকে একটি প্রতীকী চরিত্রে পরিণত করেছে। কারণ, বাংলার মানুষের কল্পনা, সাহিত্য আর শিল্পে বেহুলা-লখিন্দরের প্রেমকাহিনি দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ আবেগের জায়গা দখল করে আছে। আর প্রত্নস্থানের এই রহস্যময় পরিবেশ সেই গল্পকে আরও জীবন্ত করে তোলে।
স্থানীয় বাসিন্দা দুলাল হোসেনের মতো অনেকের মনেও সেই গল্পের ছায়া। বহু বছর ধরে তাঁরা বিশ্বাস করে এসেছেন, গোকুল মেধ বেহুলার বাসরঘর। দুলাল হোসেন বলেন, লোকমুখে শোনা যায়, রাতে নীরবতা নেমে এলে এখনো নাকি বেহুলার কান্নার শব্দও শোনা যায়। মেলা, গান, পালাগান—সব জায়গাতেই গোকুল মেধ স্থান পেয়েছে এক রোমাঞ্চকর লোকশ্রুতির অংশ হিসেবে। অথচ বাস্তবে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেহুলার কোনো চিহ্নই পাওয়া যায়নি। বরং মিলেছে প্রাচীন বৌদ্ধ প্রতিকৃতি, টেরাকোটা ফলক, প্রার্থনাকক্ষের নিদর্শন আর সেন-গুপ্ত যুগের নির্মাণশৈলীর যথেষ্ট প্রমাণ।
তাহলে বেহুলার গল্প এত জনপ্রিয় হলো কীভাবে? উত্তর খুঁজতে গেলে মনে রাখতে হয়, বাংলা সাহিত্যে মনসামঙ্গল কাব্যের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। লোককথা যত সময় পেরোয়, ততই রূপ বদলায়, নতুন জায়গায় নতুন আখ্যান জুড়ে যায়। গোকুল মেধের যেমন রহস্যময় গঠন, তেমনি এর স্থানে দাঁড়ালে এক অদ্ভুত নীরবতা ঘিরে ধরে, যা মানুষের কল্পনাশক্তিকে আরও উসকে দেয়। স্থানটি প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, লোকবিশ্বাসে ঠিক ততটাই অতিপ্রাকৃত। আর এ দুইয়ের মিলনেই গোকুল মেধকে ঘিরে তৈরি হয়েছে বহুল প্রচলিত সেই ‘বাসরঘর’-কাহিনি।
কিন্তু বেল্লাল হোসেনের মতো গবেষকদের গবেষণা স্পষ্টভাবে জানায়, এটি বেহুলার বাসরঘর নয়। লখিন্দরের শয্যা বলে যেসব কক্ষ দেখানো হয়, সেগুলো ছিল ভিক্ষুদের ধ্যানকক্ষ। ইন্দ্রের সভা কিংবা সাপ-নাগের গল্প—এ সবই সাহিত্যিক ও লোকবিশ্বাসের সৃষ্টি। ইতিহাসের নথিতে কোথাও এই স্থানের সঙ্গে বেহুলা বা মনসামঙ্গল–এর কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক পাওয়া যায় না।
তারপরও কেন গল্প টিকে আছে? কারণ, ইতিহাস মানুষের মানসে স্মৃতি তৈরি করে আর লোককথা তৈরি করে অনুভূতি। অনুভূতিই মানুষকে গল্পের কাছে বারবার ফিরিয়ে আনে। গোকুল মেধ তাই শুধুই একটি প্রত্নস্থল নয়—এটি মানুষের কল্পনা, আবেগ, সাহিত্য আর ইতিহাসের মেলবন্ধন। লোককাহিনিতে বেহুলা হয়তো এখানে এসেছিলেন ভালোবাসার খোঁজে; আর প্রত্নতত্ত্ব বলছে, এখানে সাধকেরা এসেছিলেন আত্মোন্নতির পথে। দুই গল্পই মানুষের কাছে টিকে আছে নিজের মতো করে।
আজও প্রতিদিন বহু মানুষ আসেন গোকুল মেধ দেখতে। কেউ খোঁজেন ইতিহাসের রহস্য, কেউ খোঁজেন লোকগাথার রোমাঞ্চ। কেউ ক্যামেরা হাতে স্থাপত্যের ছবি তোলেন, কেউ নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে শোনেন বাতাসের শব্দ। একপাশে আধুনিকতার গতি, অন্য পাশে হাজার বছরের স্মৃতি—গোকুল মেধ যেন দুটোর মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক সেতুবন্ধ।
দিন শেষে একটাই সত্য স্পষ্ট হয়ে যায়—গোকুল মেধের আসল ইতিহাস যতটা বৈজ্ঞানিক, তার লোকগল্প ততটাই আবেগময়। আর এ দুই মিলেই হয়তো এই স্থাপনাকে ঘিরে রহস্য কখনো ফুরাবে না। বেহুলার প্রেমগাথা থাকুক কিংবা না থাকুক, গোকুল মেধ রয়ে যাবে বাংলার প্রত্ন–ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন—একটি স্থাপনা হিসেবে, যা মানুষকে বারবার টেনে নেয় অতীতের গভীরে।